ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১ ২৩:৩৫ Asia/Dhaka

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৪২ তম বিজয় বার্ষিকী পালিত হয়েছে গত বুধবার ফার্সি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২২ বাহমানে। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানের ইসলামি বিপ্লব চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে এবং এর মাধ্যমে দেশটি থেকে কয়েক হাজার বছরের রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা উৎখাত হয়ে যায়।

এরপর থেকে বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকীতে ইরানের জনগণ রাস্তায় নেমে দেশের ইসলামি শাসনব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানান। তবে মহামারি করোনার কারণে এ বছর ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ৪২তম বিজয় বার্ষিকীতে সারাদেশে ব্যতিক্রমী শোভাযাত্রা বের হয়।পায়ে হেঁটে শোভাযাত্রার পরিবর্তে জনগণকে মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে প্রতীকী শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। তবে, সাধারণ মানুষ গাড়ি ও মোটরসাইকেল ছাড়াও লাখ লাখ মানুষ প্রতি বছরের মতো পায়ে হেঁটে শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পতাকা হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ ‘আমেরিকা ধ্বংস হোক’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক’ ধ্বনিতে স্লোগান দিয়েছেন। তো এবারে উদযাপিত হয়ে যাওয়া বিপ্লব বার্ষিকী নিয়ে আমরা কথা বলেছি, ইরান প্রবাসী গবেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদ মুনির হুসাইন খানের সঙ্গে।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব, মুনির হুসাইন খান, ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের ৪২তম বার্ষিকী উদযাপিত হলো। এতটা বছর পেরিয়ে বিপ্লব তার লক্ষ্যে কতটা পৌঁছাতে পেরেছে বলে আপনার মনে হয়?

Image Caption

মুনির হুসাইন খান: ইরানের ইসলামী বিপ্লবের ৪২তম বিজয় বার্ষিকী পালিত হলো গত বুধবার। স্বতস্ফূর্তভাবে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয়েছে। এবারের বিপ্লব বিজয় বার্ষিকীতে ইরানিদের অংশগ্রহণ লক্ষ্যণীয় ছিল। সত্যিই দেখার মতো। গোটা ইরানজুড়ে বিপ্লবের বিজয় বার্ষিকী পালিত হয়েছে উদ্দীপনা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে। এ থেকে বোঝা যায় যে ইসলামী বিপ্লব তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের এক বিরাট অংশ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে।

রেডিও তেহরান: ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের মাধ্যমে তৎকালীন মার্কিন এবং রুশ ক্ষমতার বলয় মারাত্মকভাবে ঝাঁকুনি খায়। ইরান দুই পরাশক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। কীভাবে সম্ভব হলো এটা?

মুনির হুসাইন খান: দেখুন, এটা সম্ভব হওয়ার পেছনে কতগুলো বিষয় লক্ষ্যণীয়।

বিষয়গুলো হচ্ছে: সঠিক ইসলামী মতাদর্শ, ইমাম খোমেনী (র.) মতো সুযোগ্য নেতার নেতৃত্ব, নেতার প্রতি জনগণের আস্থা ও আনুগত্য, সুমহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নেতা - জনগণের অপার আত্মত্যাগ ও কোরবানি, একমাত্র মহান আল্লাহ ছাড়া আর কোনো শক্তিতে ভয় না করা এবং সর্বশেষ পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্য- শক্তির আজ্ঞাবহ না হয়ে  ইসলামী ইরানের স্বাধীন নীতি ও অবস্থান গ্রহণ। বিপ্লব বিজয়ের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান  দুই পরাশক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে সক্ষম হয়।

রেডিও তেহরান: বলা হয় ইরানের ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার পর মুসলিম বিশ্ব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভূমিকা রাখার সুযোগ পায়। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মুনির হুসাইন খান: আপনি যেমনটি বললেন প্রশ্নে আসলে ঠিক তাই হয়েছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের আগে ইসরাইল-আরব ও মুসলিম বিশ্বে অপরাজেয় সামরিক শক্তি হিসেবে গণ্য হতো। কারণ ইসরাইল সবকটি যুদ্ধে আরবদেরকে হারিয়েছিল কিন্তু ঐ দৃশ্য রাতারাতি পাল্টে যায়  ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর পরই।

ইসরাইল

ইসরাইল ১৯৬৭ সালে মিশরের হাত থেকে গাজা উপত্যাকা মাত্র কয়েক ঘন্টায় দখল করেছিল। সেই ইসরাইল ২২ দিন, ১১ দিন, ২ দিন ও ৫৪ দিনের যুদ্ধে গাজার এক ইঞ্চি জায়গাও দখল করতে পারে নি।

২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ইসরাইলি পত্রিকা 'ইয়াদিউত অহারোনোত'  লিখেছিল we won't won in Gaza.অর্থাৎ আমরা গাজায় জয়লাভ করব না।

ইসলামি ইরানের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল-ফিলিস্তিন, গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে তাদের অশুভ নীলনকশা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হচ্ছে। দখলদার মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তানে ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। ইসলামী ইরানের সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বলিষ্ঠ ও নির্ভীক ভূমিকার কারণে আন্তর্জাতিক  বেশ কিছু ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম দেশ সোচ্চার ও প্রতিবাদী হতে পারছে। তুরস্ক পাকিস্তানের মতো কিছু মুসলিম দেশ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে। ইসলামী ইরান ও হিজবুল্লাহ আন্দোলনকে পাশে পেয়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ পশ্চিমা বিশ্ব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও আরব প্রতিক্রিয়াশীলদের সমর্থনপুষ্ট আল কায়দা ও দায়েশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন।

ঠিক একই কথা ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ আন্দোলনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ইরানের নৈতিক সমর্থন লাভ করে দীর্ঘ ছয় বছরের চাপনো যুদ্ধে ইঙ্গো-মার্কিন, সৌদি ও আমিরাতি জোটের বিরুদ্ধে সফল ও বিজয়ী হচ্ছে।

রেডিও তেহরান: আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্রদেশগুলো গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু তারা ইরানে আজকে জনগণের অংশগ্রহণে যে শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা মেনে নিতে পারছে না। অথচ রেজা শাহের রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এটা কী পশ্চিমাদের দ্বিমুখী চরিত্র নয়?

Image Caption

মুনির হুসাইন খান: জ্বি, এটাই হচ্ছে পশ্চিমাদের দ্বিমুখী চরিত্র ও নীতি। পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্স মুখে মুখে গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায় অথচ এই সাম্রাজ্যবাদী দেশ বিভিন্ন দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সেসব দেশের গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটিয়েছে। এসব গণতান্ত্রিক সরকার পাশ্চাত্য বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের অবৈধ স্বার্থেরবিরোধী ছিল বলেই তারা তাদের রোষানলে পড়েছিল। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বে গণতন্ত্রের হত্যাকারী বল্লেও অত্যুক্তি হবে না।

ব্রিটেনের হাত থেকে ইরানের তেল সম্পদ জাতীয়করণ করা হলে গণনির্বাচিত ড. মুসাদ্দেক সরকারের পতন ঘটায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন। ১৯৫১ সালে ইরানের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা ঐ কাজটি করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্র ও আরব নেতৃবৃন্দ

ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর ইরানের জনগণের অংশগ্রহণে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী প্রজাতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর অবৈধ সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থবিরোধী ও হুমকি হওয়ার কারণেই তারা এই ইসলামী শাসন ব্যবস্থাকে মেনে নিতে পারছে না। অন্যদিকে শাহ সরকার চরম জালেম- অত্যাচারী হওয়ার সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের বৈধ-অবৈধ সব স্বার্থ সংরক্ষণ করত। সে কারণে শাহ প্রশাসনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাই নিঃসন্দেহে পাশ্চাত্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বৈরি গণতান্ত্রিক সরকারের চেয়ে অবৈধ স্বার্থ সংরক্ষণকারী অত্যাচারী ও অগণতান্ত্রিক সরকারই প্রিয়। এমনকি নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রও তাদের কাছে অনেক ভালো। আর এ কারণেই তথাকথিত গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে- অগণতান্ত্রিক ও মধ্যযুগীয় ধাচের রাজতান্ত্রিক সৌদি আরব, আরব-আমিরাত, বাহরাইন, কুয়েত, কাতার ও ওমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।#

রেডিও তেহরান: জনাব মুনির হুসাইন খান, ইরানে পালিত হয়ে যাওয়া ইসলামি বিপ্লবের  ৪২ তম বিজয় বার্ষিকী নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মুনির হুসাইন খান: আপনাদেরকে এবং শ্রোতাদেরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৬

  • বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ