Pars Today
গত দুটি পর্বের আলোচনায় আমরা ফারাবির জীবনে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার অভিজ্ঞতা এবং তার রচিত গ্রন্থগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। ফারাবি সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সঙ্গীতের ওপরে তার দক্ষতা।
আজকের আলোচনায় আমরা মুসলিম বিশ্বের সংস্কৃতি ও দর্শনের উপর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুসলিম ও ইরানী দার্শনিকের রচনাসামগ্রী ও এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করবো। ফারাবিকে ভালোভাবে জানার অন্যতম উপায় হলো তার যুগের সাংস্কৃতিক ও বৈজ্ঞানিক অবস্থা সম্পর্কে জানা।
আজকের যুগে রাজনীতি, নীতিশাস্ত্র, রহস্যবাদ, দর্শন, অর্থনীতি, শিল্প এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা, জ্যোতির্বিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ফারাবির মতামতকে উপেক্ষা করা যায় না।
পাশ্চাত্য সমসাময়িকদের মধ্যে যারা ফারাবির রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন তাদের মধ্যে জার্মান বংশোদ্ভূত ইহুদি দার্শনিক লিও স্ট্রাউসের নাম উল্লেখ করা যায়। তবে সেইসাথে এটাও উল্লেখ করা উচিত যে, স্ট্রাউস প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক সময় পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের রাজনৈতিক দর্শন অধ্যয়ন করেছিলেন এবং ফারাবির প্রতি তার মনোযোগ ছিল ক্ষণস্থায়ী। তিনি একজন দার্শনিক এবং তিনি মুহসেন মাহদিসহ অনেক ছাত্রকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
ইহুদি দার্শনিক এবং চিন্তাবিদদের পাশাপাশি, বিভিন্ন বিষয়ে ফারাবি তার মতামত ও গবেষণাকর্ম দিয়ে খ্রিস্টধর্ম এবং ইউরোপের প্রাচীন রোমের ল্যাটিন ভাষাভাষী পণ্ডিতদেরকেও প্রভাবিত করেছিলেন। মধ্যযুগে আরবি-ল্যাটিন অনুবাদ আন্দোলনের সাথে গ্রীক থেকে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ আন্দোলনের মিল রয়েছে। তখন প্রচুর সংখ্যক ইসলামী দার্শনিক ও পণ্ডিতদের গবেষণাকর্ম আরবি থেকে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল এবং এভাবে পশ্চিমাদের কাছে মুসলিম গবেষণাকর্মগুলো তুলে ধরা হয়েছিল।
বেন ফালকুরাহ নামে অন্য আরেকজন ইহুদি দার্শনিক নিজের হিব্রু ভাষায় লেখা গ্রন্থে ফারাবির রচনা থেকে সরাসরি বেশ কিছু অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করেছেন, যা থেকে ফারাবির চিন্তাদর্শনের সাথে তার গভীর পরিচিতির বিষয়টি ফুটে ওঠে। তিনি একজন ইহুদি হয়েও ফারাবির মূল্যবোধের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। বেন ফালকুরা তার বই "দ্য বিগিনিং অফ সায়েন্স" এর দ্বিতীয় অংশ 'বিজ্ঞানের শ্রেণিবিন্যাস' নামে একটি অধ্যায়ে যা কিছু লিখেছেন তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় তিনি ফারাবির লেখা দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছিল।
গত পর্বের আলোচনায় আমরা আল ফারাবির চিন্তা-গবেষণা ও রচনাসামগ্রীর মাধ্যমে আরেক বিখ্যাত মনীষী ইবনে সিনার প্রভাবিত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছিলাম। তবে, ইবনে সিনা ছাড়াও, ফারাবি অন্যান্য মুসলিম চিন্তাবিদদেরও প্রভাবিত করেছেন, যাদের প্রতি খুব কমই দৃষ্টি দেয়া হয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন ইবনে মাসকুইয়েহ যার দুটি বই "আল-তাহারে" ও "তাহযীব আল-আখলাক" এর কথা উল্লেখ করা যায়।
গত পর্বের আলোচনায় আমরা আব্বাসিয় খেলাফতের সময় অন্যান্য জাতির গ্রন্থ ও জ্ঞানগবেষণা আরবি ভাষায় অনুবাদের কথা উল্লেখ করেছিলাম।
গত পর্বের আলোচনায় আমরা আল ফারাবির যুগের মিশর ও পূর্বগ্রিস বা আজকের তুরস্কের কয়েকটি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বর্ণনা দিয়েছিলাম। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও শিক্ষাকেন্দ্র হচ্ছে বর্তমান সিরিয়ার 'হাররান' শিক্ষাকেন্দ্র যাকিনা আলেকজান্ডারের দখলদারিত্বের সময় থেকে গ্রীক সংস্কৃতি এবং এরপর অরামাইক সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল।
আজকের অনুষ্ঠানে আমরা ইরান ও মুসলিম বিশ্বের অমর মনীষী আল ফারাবির যুগের সাংস্কৃতিক ও জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার পরিস্থিতির ওপর পর্যালোচনা করবো।