জুন ০৭, ২০২৩ ১৫:৫৪ Asia/Dhaka

অনিরাপদ খাদ্যের ঝুঁকি প্রবলতর এই বাংলাদেশে। তবে কখনো কখনো নিরাপদ খাদ্যের চেয়ে খাদ্য প্রাপ্তিই এখানে বড় হয়ে দেখা দিত। গত ৩ বছর করোনা মহামারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দামামায় বাংলাদেশে তেল, চাল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, মাংস, দুধ, ডিমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে সরবরাহ ঘাটতি এবং দামের উত্তাপে সেটি আঁচ করা যায়। পরিত্যক্ত চাল কুড়িয়ে পেট বাঁচানোর চেষ্টাই তার বহিঃপ্রকাশ।

সুস্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে নিরাপদ খাদ্যের যোগান থাকা গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যের মাধ্যমে যে সকল রোগ ছড়ায় তা সাধারণত সংক্রামক ও ক্ষতিকর। খাদ্য ও পানিবাহিত রোগের কারণ হলো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, যা খালি চোখে দেখা যায় না। এ সকল রোগব্যাধির উৎস দূষিত পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে আমাদের দেহে প্রবেশ করে।

খাদ্যবাহিত জীবাণুর কারণে মারাত্মক ডায়রিয়া, এমনকি মেনিনজাইটিস পর্যন্ত হতে পারে। তবে, খাদ্যে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার অধিক ক্ষতি করে থাকে। এটি স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অক্ষমতা বা মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে, যেমন: ক্যান্সার। খাদ্যনিরাপত্তার একটি জরুরি কাজ হলো খাদ্যব্যবস্থার প্রতিটি ধাপে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। এই ধাপগুলো ফসল সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, সরবরাহ থেকে শুরু হয়ে খাবার প্রস্তুত ও গ্রহণ করা পর্যন্ত বিস্তৃত। অনিরাপদ খাদ্য শুধু মানুষের স্বাস্থ্য নয়, বরং অর্থনীতির জন্যেও ক্ষতিকর। অনিরাপদ খাদ্যের কারণে অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষত নারী ও শিশু এবং দেশান্তরী মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এসব ভেজাল খাদ্য বন্ধে, দেশে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণীত হয় এবং ২০১৩ সালে করা হয় নিরাপদ খাদ্য আইন। কিন্তু এর সুষ্ঠু আইন প্রয়োগ না হওয়ায় এবং আমাদের সচেতনতার অভাবে অনিরাপদ খাদ্যের বেড়াজালে পড়তে হচ্ছে আমাদের। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এখন খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণের প্রত্যেকটি ধাপেই খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো হয়ে থাকে। এসব বিষযুক্ত খাবার খেয়ে প্রতি মুহূর্তেই আমরা ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়। এ কারণে প্রতি বছর মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ।

এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে আজ (বুধবার) পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস। “ফুড স্ট্যান্ডার্ডস সেভ লাইভস” প্রতিপাদ্যে পালিত দিবসটিতে বড় আলোচনা দাঁড়িয়েছে যে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাদ্যের মান নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই। কারণ বাংলাদেশে খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাটের কারণে হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি এবং মৃত্যু ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

তাই ট্রান্সফ্যাট বন্ধে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, বারডেম জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুন্নাহার নাহিদ। তিনি বলেন, “ট্রান্সফ্যাট শরীরে ভালো চর্বির পরিমাণ কমায় এবং খারাপ চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যার ফলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।”

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “প্রবিধানমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাবার থেকে ট্রান্সফ্যাট নির্মূল করতে পারলে মানুষকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাবে।”

এ বিষয়ে সরকারের দফতর গুলোর সিদ্ধান্ত বা উদ্যোগ কী জানতে চাইলে, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এর উপ-পরিচালক (কৃষি ও খাদ্য- মান উইং) এনামুল হক জানান, “প্রবিধানমালা অনুসারে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট এর পরিমাণ নির্ধারিত মাত্রায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বিএসটিআই ইতোমধ্যে স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন এর কাজ শুরু করেছে।”#

পার্সটুডে/বাদশাহ রহমান/আশরাফুর রহমান/৭

 

ট্যাগ