মানবতার আহ্বানে চলছে বাংলা বর্ষবরণ, জাতিকে জেগে ওঠার তাগিদ
বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে চলছে বাংলা নববর্ষ-১৪২৩ সনকে বরণের অনুষ্ঠানমালা। ঐতিহ্য অনুযায়ী আজ (বৃহস্পতিবার) ভোর সোয়া ছয়টার দিকে রমনার বটমূলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয় ছায়ানট। আয়োজন শেষ হয় সকাল সাড়ে আটটার দিকে। পুরো আয়োজনে প্রায় দেড় শ জন শিল্পী অংশ নেন।
ছায়ানটের বর্ষবরণের এবারের বিষয় মানবতা। তাই তাদের বর্ষবরণের গানে, কবিতায় মানবতার মর্মবাণী ফুটে উঠেছে। বাঙালি জাতিকে নতুন করে জেগে ওঠার তাগিদ দেয়া হয়েছে।
ছায়ানটের আয়োজনে শামিল হতে ভোরেই রমনার বটমূলে নানা শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে। রমনার এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। রমনায় প্রবেশের ক্ষেত্রে করা হয় তল্লাশি।
সকাল নয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে ‘অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে’ স্লোগানে এবার মঙ্গলশোভার মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয়। প্রতিবারের মতো এবারও শোভাযাত্রায় আছে নানা রঙের মুখোশ, পাখি, ঘোড়া, জিরাফসহ নানা প্রতিকৃতি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘মা ও শিশু’। আয়োজকরা জানিয়েছেন, শিশু নির্যাতন বন্ধ হোক, এটাই এবারের নতুন বছরের কামনা, শিশু নির্যাতন যেন আর হয়।
‘বাংলা নববর্ষ ১৪২৩’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কমসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। বাংলা নববর্ষের তাৎপর্য তুলে ধরে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। বিভাগীয় শহর, জেলা শহর ও সব উপজেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনসহ আলোচনা সভা ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করছে স্থানীয় প্রশাসন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউটগুলো, বিসিক নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে। বাংলা বর্ষের প্রথম দিনে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে ও কারাবন্দিদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং কয়েদিদের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় জাদুঘর ও প্রত্নস্থানগুলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হচ্ছে (শিশু-কিশোর, প্রতিবন্ধী ও ছাত্রছাত্রীদের বিনা টিকিটে)। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্ব-স্ব ব্যবস্থাপনায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা হচ্ছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। অভিজাত হোটেল ও ক্লাব বিশেষ অনুষ্ঠানমালা এবং ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন করেছে।
নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দিনটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। # (এআর)