থানায় পিটিয়ে হত্যার দায়ে উপ-পরিদর্শকসহ তিন পুলিশ সদস্যের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
-
ছবি- বাঁ থেকে এসআই জাহিদ, এসআই কামরুজ্জামান এবং এসআই রাশেদুল ইসলাম
রাজধানীর পল্লবী থানায এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার দায়ে থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদসহ তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া মামলার অপর দুই আসামিকে সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।
নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের এই প্রথম রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া এই তিন পুলিশ সদস্যের প্রত্যেককে বাদীকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজ বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন।রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি জানান,আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি।
আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাপস কুমার পাল বলেন, আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। অপরদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতে আমরা সন্তুষ্ট না। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।
মামলার আসামিদের মধ্যে এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ ও পুলিশের সোর্স সুমন কারাগারে আছেন। একই থানার এএসআই রাশেদুল ইসলাম জামিনে এবং এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু এবং পুলিশের সোর্স রাসেল জামিনে নিয়ে পলাতক রয়েছেন। রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এছাড়া জামিনে থাকা এএসআই রাশেদুল আদালতে হাজির হন। আদালত তাদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া পলাতক দুজনের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারি করেন আদালত। মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর-১১ নম্বর সেক্টরে স্থানীয় সাদেকের ছেলের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান চলাকালে পুলিশের সোর্স সুমন মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় জনি ও তার ভাই সুমনকে চলে যেতে বলেন। সুমন চলে গেলেও পরদিন এসে আবার আগের মতো আচরণ করতে থাকেন। তখন জনি ও তার ভাই তাকে চলে যেতে বললে সুমন পু্লিশকে ফোন করে তাদের ধরে নিয়ে যান। তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার লোকজন ধাওয়া দিলে পুলিশ গুলি ছোড়ে।
পরে থানায় নিয়ে জনিকে নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে জনির অবস্থা খারাপ হলে ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত জনির ছোট ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি।
২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল, এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু, সোর্স সুমন ও রাশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।এ মামলায় ২৪ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত।#
পার্সটুডে/আশরাফুর রহমান/ বাবুল আখতার/ ৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।