বাংলাদেশে করোনা: টিকার ক্রয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং বিভিন্ন মহলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (রোববার) জানিয়েছেন, আমরা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করেছি। সেজন্য যত টিকা দরকার আমরা তা ক্রয় করব। কোনো মানুষ যেন ভ্যাকসিন নেওয়া থেকে বাদ না থাকে। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেদিকেও দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আজ রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং ‘এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান-২০২১’-অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে টীকা প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন।
করোনা মোকাবেলায় সরকার লেজে গোবরে অবস্থায় পড়েছে: ফখরুল
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার লেজেগোবরে অবস্থা সৃষ্টি করেছে। টিকা নিয়ে দুর্নীতি করেছে, জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। আর লকডাউনের নামে করছে নিষ্ঠুর তামাসা ।
গাজীপুরে পোশাক শ্রমিককদের টিকা প্রদান শুরু
এদিকে, আজ (১৮ জুলাই) থেকে গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই শুধুমাত্র এনআইডি কার্ড দেখিয়ে করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকার তুসুকা ডেনিম কারখানায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ টিকাদান কর্মসুচীর উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
বেসরকারি সাহায্য সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও গাজীপুর স্বাস্থ্য বিভাগ এ টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে এবং এর সাথে যারা যুক্ত তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে শতভাগ শ্রমিক-কর্মচারিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় আনা হবে। পোশাকখাত যেহেতু আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে একটা অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে আছে সেজন্য প্রথমে পোশাক শ্রমিকদের এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শিল্প কারখানার শ্রমিকদেরও এ টিকা দেয়া হবে।
সিনোফার্মের আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে
চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে কেনা আরও ২০ লাখ ডোজ টিকার দু’টি চালানে দেশে এসে পৌঁছেছে। এ নিয়ে সিনোফার্মের মোট ৪০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এলো। গতকাল শনিবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে টিকা বহনকারী প্রথম বিমানটি অবতরণ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এরপর রাত ৩টায় অবতরণ করে দ্বিতীয় বিমানটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ও লাইন ডাইরেক্টর ড. মো. শামসুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, চুক্তি অনুযায়ী, তিন মাসের মধ্যে সিনোফার্ম থেকে মোট দেড় কোটি ডোজ টিকা দেশে আসবে।
এর আগে গত ১২ মে সিনোফার্মের তৈরি পাঁচ লাখ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশে পাঠায় চীন। এরপর দ্বিতীয় দফায় ১৩ জুন আসে ছয় লাখ ডোজ টিকা। সব মিলিয়ে ১১ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে চীন। উপহার হিসেবে আরও ১০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশের ১ কোটি ১১ লাখ ১২ হাজার ৮৫৫ জন মানুষ করোনা টিকার আওতায় এসেছেন। এদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৬৮ লাখ ১৩ হাজার ১৫০ এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৭০৫ জন।
ভারতীয় টিকা অনিশ্চিত
প্রথমে টিকা সংগ্রহের একক উৎস হিসেবে ভারতের সাথে চুক্তি করে বাংলাদেশ। কিন্তু সম্পূর্ণ মূল্য আগাম পরিশোধ করা সত্ত্বেও মাঝপথে সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ভারত। এর পর বাংলাদেশ বাধ্য হয়ে অন্য দেশের কাছ থেকে টিকা সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেয়। ইতোমধ্যে চীন এবং আমেরিকা থেকে এসেছে টিকা। এ অবস্থায়, ভারত আজ জানিয়েছে, তাদের দেশে টিকার যোগান বাড়লে বাংলাদেশকে টিকা সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী আজ রোববার সকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হয়ে নিজ দেশে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা জানান।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে টিকা সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে দোরাইস্বামী বলেন, টিকা সরবরাহের অবস্থা কী, সেটি জানার জন্যই তিনি ভারতে যাচ্ছেন। যদি ভারতে জোগান বেড়ে থাকে, তাহলে চেষ্টা থাকবে দ্রুত বাংলাদেশকে টিকা দেওয়ার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিক্রম দোরাইস্বামী আরও জানান, করোনার কারণে যেহেতু সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, তাই ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়ে যেসব বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন, যাঁদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, আবেদন করলেই তাঁদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে। এতে কোনো সমস্যা হবে না।#
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/১৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।