ডেঙ্গু সন্দেহে ১০ মৃত্যু
বাংলাদেশে নতুন আতঙ্ক: একসাথে করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমণ
বাংলাদেশে রোগ বিস্তারের পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যাচ্ছে জুন থেকে সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুর মৌসুম। তবে চলতি বছর এ মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের বছরের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে।
সরকারি তথ্য ও অনুযায়ী, চলতি বছর জুন থেকে আগস্টের ৪ তারিখ পর্যন্ত মোট ৬৫ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৫৮৩ জন। এর মধ্যে, জুনে ২৭২ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ এবং আগস্টের প্রথম চার দিনে এক হাজার ২৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। সেই হিসাবে গতবছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি বছরের এই সময়ে রোগী বেড়েছে ৭০ গুণ।
রোগ বিশেষজ্ঞ এবং কীটতত্ত্ববিদদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সরকারি হিসেবে ডেঙ্গুর যে চিত্র দেখানো হচ্ছে বাস্তবে রোগী আরও বেশি। কারণ, সব রোগী হাসপাতালে যায় না এবং যারা হাসপাতাল কেবল তাদের হিসাবটাই পাচ্ছে সরকার।
একসাথে করোনা ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ
এদিকে, আরও আতঙ্কের বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে একই রোগীর দেহে একই সাথে করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমনের ঘটনা। চিকিৎসকরা বলছেন, একসঙ্গে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। ঘটছে মৃত্যুর ঘটনাও।
রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক গণমাধ্যমকে জানান, গত এক মাসে সরকারি হাসপাতাল ও তাদের প্রাইভেট চেম্বারে অন্তত পাঁচজন রোগী পেয়েছেন, যারা একসঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমিত হয়েছেন।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আজাহারুল হক। প্রথমে করোনাভাইরাসে এবং পরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।
হাসপাতাল সূত্র ও মৃতের স্বজনরা জানান, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ করে জ্বর, গলা ব্যথা ও শরীরে যন্ত্রণা অনুভব করেন অধ্যাপক আজাহারুল। নমুনা পরীক্ষা করার পর তার করোনা শনাক্ত হয়। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তার ডেঙ্গুও পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ডেঙ্গু সংক্রমিত হওয়ার প্রমাণও মেলে। এরপর ২৮ জুলাই তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে পরদিন তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই শিক্ষকের মৃত্যু হয়। একসঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর বিরল দৃষ্টান্ত এটি।

এদিকে, বৃহস্পতিবার নাগাদ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু সন্দেহে ১০টি মৃত্যুর তথ্য পাঠানো হয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর)। তবে এখনও সেগুলো পর্যালোচনা করা হয়নি।
চলতি বছরের শুরুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা আগাম সতর্ক করে জানিয়েছিলেন, বছরের অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে ঢাকায় কিউল্যাক্স মশার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে চার গুণ।
মশা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সিটি করপোরেশনের অবহেলা ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকেই দায়ী করছেন কীটতত্ত্ববিদরা। তারা বলছেন, বছরজুড়ে যেখানে মশকনিধন চলার কথা, সেখানে ডেঙ্গু কমার পর দুই সিটি করপোরেশনে কোনও কাজই হয়নি।
এ প্রসঙ্গে উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন অভিযানের পাশাপাশি ভ্রম্যমাণ আদালত ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষকে সচেতন করে আসছি।’
ঢাকা মহানগরীতে (উত্তর) মশা নিধন অভিযানে অংশ নিয়ে তিনি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন প্রতি শনিবার সকালে অন্তত ১০ মিনিট সময় ধরে নিজ নিজ বাসস্থানে জলাবদ্ধ ও অপরিচ্ছন্ন স্থানগুলো পরিষ্কার করেন। তাতেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে।#
পার্সটুডে/আব্দুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।