ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর ইরান সফরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শিয়া আস-সুদানি গতকাল দুদিনের সফরে তেহরানে এসে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসির সঙ্গে দেখা করার পর তিনি ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর সঙ্গেও দেখা করেছেন এবং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এটি শিয়া আস- সুদানির তৃতীয় বিদেশ সফর। তার প্রথম সফর ছিল জর্ডানে এবং দ্বিতীয় সফর ছিল কুয়েতে। বলা হচ্ছে যে শিয়া আস সুদানি খুব শিগগিরই সৌদি আরব ও তুরস্কে যাবেন। ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর এসব বিদেশ সফর প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাাশি মতপার্থক্য ও বিরোধ নিরসনে তার আন্তরিক চেষ্টার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
নতুন ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বিদেশ ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে ইরানকে নির্বাচন করা থেকে বোঝা যায় যে একদিকে যেমন তিনি ইরানের সাথে সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও শক্তিশালী করতে আগ্রহী তেমনি তেহরানও বাগদাদের সাথে সম্পর্ক সম্প্রসারণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্রকৃতপক্ষে ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর তেহরান সফরের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটানো। ইরান ও ইরাকের মধ্যে এখন বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার। আর ইরাকের ১৩ তম সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে বাণিজ্যের এই পরিমাণ বাড়িয়ে ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা।
এ প্রসঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রায়িসি ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শিয়া আস-সুদানির সঙ্গে বৈঠকে ইরাকের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নতুন সরকার গঠনের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান সর্বদা একটি ঐক্যবদ্ধ ইরাকি জাতি ও শক্তিশালী সরকারকে স্বাগত জানায় এবং সমর্থন করে। অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণসহ ইরাকের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পর্ক উন্নীত করার জন্য আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট রায়িসি আরো বলেন: বাণিজ্য ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইরাকের সঙ্গে তেহরানের শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতামূলক যৌথ কমিশনের নিয়মিত বৈঠক এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
শিয়া আস-সুদানির তেহরানে বর্তমান সফর ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলে চলমান পরিস্থিতির দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। ইরানে অস্থিরতার পরে শত্রুরা ইরানের বিরুদ্ধে যে অঞ্চলগুলো ব্যবহার করেছিল তার মধ্যে সীমান্তবর্তী কুর্দিস্তান অন্যতম। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডবাহিনী বা আইআরজিসির মাধ্যমে প্রকাশি একটি রিপোর্ট অনুুযায়ী কোমলেহ, ডেমোক্রেট, পেজাক এসব গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা কুর্দিস্তান অঞ্চলের ভৌগলিক সুযোগ নিয়ে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং ইরানে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।
এর উপর ভিত্তি করে আইআরজিসি উত্তর ইরাকে সন্ত্রাসীদের অবস্থানে বিভিন্ন পর্যায়ে হামলা চালিয়েছে এবং একই সাথে সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইরাকি সরকার এবং ইরবিলের স্থানীয় সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে। সুতরাং, শিয়া আস সুদানির ইরান সফরের সময় তেহরানের একটি প্রধান ইচ্ছা হলো কুর্দিস্তান অঞ্চলের উপর ইরাকের পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং ইরানে সন্ত্রাসী বাহিনীর অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে চলমান আলোচনা এগিয়ে নেয়াও সুদানির তেহরানে সফরের অন্যতম লক্ষ্য। এ পর্যন্ত বাগদাদের মধ্যস্থতায় ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে ৫ দফা আলোচনা হয়েছে। ইরাকের নতুন সরকারও তেহরান এবং রিয়াদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রাখার উপর জোর দিয়েছে এবং মনে হচ্ছে যে শিয়া আস- সুদানির সফরের সময় এ বিষয়টি আবারো ইরানের কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরা হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে ইরান সমর্থিত ইরাকের নতুন সরকারের আমলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অতীতের তুলনায় আরো বৃদ্ধি পাবে। এ প্রসঙ্গে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ শিয়া আস-সুদানি সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির সাথে এক বৈঠকে তার দেশে নতুন সরকার গঠনের এক মাস পর তেহরান সফরের সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, ইরাকের বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইরানের একটি সুবিধাজনক এবং চমৎকার অবস্থান রয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ইতিবাচক ও সন্তোষজনকভাবে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে।#
পার্সটুডে/এমবিএ/৩০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।