ইসরায়েলি আগ্রাসনে ইরানের একজন শহীদের গল্প
'আমার ছেলে সামরিক ব্যক্তি না হলেও দেশের জন্য জীবন দিয়েছে': শহীদের মা
-
• শহীদ ইকতেদার মোহাম্মদ জাভেদ নেজামি
পার্সটুডে- মোহাম্মদ জাভেদ ছিলেন একজন হাসিখুশি যুবক এবং প্রোগ্রামার যিনি ইহুদিবাদী ইসরায়েলের ড্রোন হামলার শিকার হয়েছিলেন।
"মোহাম্মদ জাভেদ একজন সামরিক ব্যক্তি ছিল না, একজন পারমাণবিক বিজ্ঞানী ছিল; কম্পিউটার সফটওয়্যারে ডিগ্রিধারী ২৬ বছর বয়সী একজন তরুণ, একজন এসইও প্রোগ্রামার যে কিনা কয়েক বছর ধরে অ্যাস্পিয়ান ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমস ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিতে কাজ করছিল। সে ছিল আমার এবং তার বাবার জন্য একটি ভরসা এবং তার বোনদের সাহায্যকারী। তার জন্য আমাদের স্বপ্ন ছিল, কিন্তু তেহরানে ইসরায়েলি আক্রমণে তার শাহাদাতের সাথে সাথে আমাদের সমস্ত স্বপ্ন ধুলিষ্যাৎ হয়ে গেল।"
দৈনিক হামশাহরি পত্রিকার অনলাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, উপরিউক্ত এই কথাগুলো শহীদ মোহাম্মদ জাভেদ বাহিরাইয়ের মা মোজগান মতিনের সাক্ষাৎকারের কয়েকটি লাইন, যার ছেলে ১৪ জুন রাতে ভার্দাভার্ড পাড়ায় ড্রোনের আঘাতে শহীদ হয়েছিলেন।
সে খুব চিন্তিত থাকলেও আমাদের সান্ত্বনা দিত
"সেই রাতে, মোহাম্মদ খুব চিন্তিত ছিল। তাকে শান্ত করার জন্য, আমি তাকে ৮ বছরের যুদ্ধের কথা বলতাম, যে আমরা এই দিনগুলির চেয়েও কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম; যখন আমাদের কিছুই ছিল না। কিন্তু মোহাম্মদ শান্ত হয়নি।" …
মোজগান মতিন এই বক্তব্য দিয়ে তার কথোপকথন শুরু করেন এবং আরও বলেন: "সেই রাতে, মানসিক চাপ কমানোর জন্য, আমরা চিতগার লেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা পৌঁছানোর সাথে সাথে তার বন্ধু জানায় যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। মোহাম্মদ খুব খুশি হয়েছিল এবং হ্রদের অনেক অংশ এবং সেখানে বেড়াতে আসা মানুষের ভিডিও করছিল। অবশ্য, তার মন খারাপ ছিল এ কারণে যে আগের দিন দেশের বেশ কয়েকজন জেনারেল শহীদ হয়েছেন। দেশের আকাশসীমা প্রতিরক্ষার জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করার জন্য সে উন্মুখ হয়েছিল। আমরা প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চিতগার হ্রদ এলাকায় ঘুরছিলাম। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন সে আমাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেয়….."
পরিবারটি গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ছিল, সবাই গল্প করছিল। শহীদের মা বলেন: "ঔষধ খাওয়ার পর আমি রাত ১:০০ টার দিকে ঘুমাতে যাই। কিন্তু পরে, যখন আমরা মোহাম্মদের ফোন পাই, তখন আমরা তার টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে জানতে পারি যে সে ভোর ৩:০০ টা পর্যন্ত জেগে ছিল, তার বন্ধুদের সাথে বাড়ির কাছের বোমা বিস্ফোরণের শব্দ সম্পর্কে কথা বলছিল। যখন তার বন্ধু তাকে বলে: "তুমি ঘুমাতে যাও," তখন সে উত্তর দেয়: "আমি ঘুমাতে যাচ্ছি, কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি যে কিছু একটা ঘটবে।"
আমি আমার ছেলেকে বারান্দায় দেখতে পেলাম
"রাত আড়াইটার দিকে একটা বিশাল বিস্ফোরণের শব্দে আমরা ঘুম থেকে জেগে উঠি। মোহাম্মদ এবং তার বোন লিভিং রুমে ঘুমাচ্ছিলেন। আমরা যখন তাকালাম, মোহাম্মদকে কোথাও খুঁজে পেলাম না…" মা তার ছেলের মৃত্যুর মুহূর্ত সম্পর্কে এ কথা বলেন এবং তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি তার ছেলের মাথার কাছে পৌঁছান। তিনি বলেন, "আমাদের বাড়ি খুব বড় নয়। মোহাম্মদকে খুঁজে পেতে বেশি সময় লাগেনি। আমাদের রান্নাঘরে একটি লম্বা জানালা আছে যা থেকে বারান্দার দিকে দেখা যায়। আমি মোহাম্মদকে বারান্দা এবং রান্নাঘরের মাঝখানে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখি, তার মাথা রক্তে ভেজা। প্রতিবেশীদের সহায়তায়, আমরা মোহাম্মদকে শহীদ সোলেইমানি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, কিন্তু ততক্ষণে মোহাম্মদ শাহাদাত বরণ করে। স্পষ্টতই, ইসরায়েলি ড্রোনগুলো আমাদের পাড়ার সিটি কাউন্সিল ভবন এবং একটি অসমাপ্ত ভবনে আঘাত করে। আমরা ধারণা করছি যে মোহাম্মদ বারান্দায় গিয়েছিল দেখার জন্য এবং যখন সে বাড়ি ফিরে আসে, তখন ড্রোনের টুকরো থেকে তার মাথায় আঘাত লাগে।”
পরিবারের হাসিখুশি ছেলে
মোহাম্মদ ছিল আমার একমাত্র ছেলে, সে ছিল আমার, তার বাবা এবং বোনের চোখে জ্যোতি। মোজগান মতিন এই কথা বলতে বলতে তার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে থাকে। তিনি বলেন, মোহাম্মদ ছিল আমাদের বাড়ির প্রাণ এবং সর্বদা আমাকে এবং তার বাবাকে সাহায্য করত। তার বাবার সাথে সে ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতো এবং এমনকি পরিবারের খরচেও সাহায্য করত। সে তার বেশিরভাগ সময় তার পরিবারের সাথে কাটাতো। সে একজন যুক্তিবাদী ছেলে ছিল এবং খুব কমই রাগ করত এবং যুক্তি দিয়ে অন্যদের বোঝানোর চেষ্টা করত। আমার ছেলে মজার এবং হাসিখুশি ছিল। আমি আমার ছেলেকে হারিয়েছি, কিন্তু আমাদের কিছু স্বদেশবাসীর জন্য আফসোস যারা মাতৃভূমির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং দেশে ইসরায়েলের আক্রমণে আনন্দ প্রকাশ করেছে।#
পার্সটুডে/এমআরএইচ/২৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।