ইরানে ইউনেস্কোর আঞ্চলিক প্রধানের উপস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
(last modified Sun, 23 Feb 2020 11:36:16 GMT )
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০ ১৭:৩৬ Asia/Dhaka
  • ইউনেস্কোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান স্ফেতান স্ফেতকভস্কি
    ইউনেস্কোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান স্ফেতান স্ফেতকভস্কি

তেহরানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ইউনেস্কো আঞ্চলিক অফিস এবং এশিয়ান কোঅপারেশন ডায়ালগ বা এসিডি'র সাংস্কৃতিক সমন্বয় কেন্দ্রের সহায়তায় ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করেছে।

এত ইউনেস্কো ও এসিডির আঞ্চলিক অফিসপ্রধান, কর্মকর্তাবৃন্দ, ভারত, পাকিস্তান, সিরিয়া, লেবানন, মঙ্গোলিয়া, ইরান ও তেহরানে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী, প্রবাসী বাংলাদেশি, স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিনিধি এবং দূতাবাসের কর্মকতা-কর্মচারীরা সপরিবারে অংশগ্রহণ করেন।

২১ ফেব্রুয়ারি ইরানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ২২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বৃহত্তর পরিসরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

প্রথম দিন (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, শহীদ মিনারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।

দ্বিতীয় দিন (২২ ফেব্রুয়ারি) আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা ভাষাশহীদ দিবসের তাৎপর্য এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রাসঙ্গিকতার ওপর আলোকপাত করেন। দূতাবাসের কাউন্সেলর মো. হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় পরিচালিত এ সভায় স্বাগত বক্তব্যে কমার্সিয়াল কাউন্সেলর মো. সবুর হোসেন অমর একুশের প্রেক্ষাপট এবং দিবসটি কীভাবে ইউনেস্কোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষিত হল তা বর্ণনা করেন।

এরপর এসিডি সাংস্কৃতিক সমন্বয় কেন্দ্রের সভাপতি মো. ইসা রেজাজাদেহ মহান ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। ভাষা-দার্শনিকদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, নতুন একটি ভাষা শেখার অর্থ কেবল কিছু নতুন শব্দ শেখাই নয়, বরং একটি নতুন চিন্তা-পদ্ধতি শেখা। কোনো একটি ভাষা হারিয়ে গেলে তার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের বিশ্বও হারিয়ে যায়।

ইউনেস্কোর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান স্ফেতান স্ফেতকভস্কি সংগঠনটির পক্ষ থেকে ঘোষিত এ বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতিপাদ্য “ভাষার কোনো সীমানা নেই” (ল্যাঙ্গুয়েজ উইদাউট বর্ডারস) বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন এবং বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলো সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসোল আযম সরকার

আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইরানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এএফএম গওসোল আযম সরকার। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে বাংলা ভাষার অধিকারের দাবিতে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মত্যাগ এবং ভাষা আন্দোলনের সূচনা থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই জাতীয় ঐক্য ও পরিচিতির বীজ নিহিত ছিল যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রেরণা যুগিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণে দিনটির ভূমিকা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত সর্বস্তরে বাংলা ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি ভাষাবৈচিত্র সংরক্ষণ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল বার্তা হলো ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র সংরক্ষণ করা এবং পৃথিবীর বুক থেকে লোকজ সংস্কৃতির আধার ভাষাগুলোকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা। তিনি ইউনেস্কোর মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে মহান ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভূমিকার কথা আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ভাষাবৈচিত্র রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার ও  উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানের শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে প্রবাসী বাংলাদেশি, ছাত্রছাত্রী এবং শিশুরা নাচ, গান ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করে। দিবসটি উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণ অমর একুশে সম্পর্কিত পোস্টার ও ব্যানার দিয়ে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। সবশেষে উপস্থিত সবাইকে বাংলাদেশি খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। বিদেশি অতিথিরা বাংলাদেশি খাবারের বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।#

পার্সটুডে/পিআর/এসএ/২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।