ইসরাইলি চাপ ও পশ্চিমা মিডিয়ার বিকৃত বয়ান: গাজার অনাহার অস্বীকারের রাজনীতি
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151882-ইসরাইলি_চাপ_ও_পশ্চিমা_মিডিয়ার_বিকৃত_বয়ান_গাজার_অনাহার_অস্বীকারের_রাজনীতি
পার্সটুডে: একজন ইংরেজ লেখক প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, পশ্চিমা গণমাধ্যম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধগুলো প্রচারের ক্ষেত্রে এই দখলদার শাসনের প্রভাবাধীন হয়ে পড়েছে।
(last modified 2025-09-14T08:34:08+00:00 )
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫ ১৭:৩১ Asia/Dhaka
  • রেবেকা রুথ গোল্ড
    রেবেকা রুথ গোল্ড

পার্সটুডে: একজন ইংরেজ লেখক প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন যে, পশ্চিমা গণমাধ্যম ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধগুলো প্রচারের ক্ষেত্রে এই দখলদার শাসনের প্রভাবাধীন হয়ে পড়েছে।

গাজার মানবিক সংকটের খবর পরিবেশনে পশ্চিমা গণমাধ্যম বারবার ঘটনাবলি বিকৃত করা ও ইসরাইল-অনুগত বয়ান পুনরুৎপাদনের অভিযোগের মুখে পড়েছে। শিশুদের অনাহারে কাতরানোর ছবির ভুল উপস্থাপন বা দুর্ভিক্ষে মৃতদের মৃত্যু-পূর্ব শারীরিক জটিলতার সঙ্গে মৃত্যুকে যুক্ত করে দেখানোর মতো উদাহরণও সামনে এসেছে। এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন শুধু গাজার ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কে আড়াল করে না, বরং পরিকল্পিতভাবে দুর্ভিক্ষ অস্বীকার এবং গাজা অবরোধে ইসরাইলি অপরাধ ধামাচাপার পথও প্রশস্ত করে।

তথ্যসূত্র 'দ্য নিউ আরব' জানিয়েছে, ইংরেজ লেখক রেবেকা রুথ গোল্ড স্বীকার করেছেন যে, ইসরাইল পশ্চিমা গণমাধ্যমের বয়ানকে প্রভাবিত করছে। তিনি লিখেছেন, গাজায় ইসরাইলের অবরোধ আসলে মধ্যযুগীয় ধাঁচের অবরোধ, তাই এটা অস্বাভাবিক নয় যে, দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা শাসকগোষ্ঠী তা অস্বীকারের সব কৌশলও ব্যবহার করবে।

গোল্ড উদাহরণ টেনে লেখেন, এর আগেই জুলাই মাসে নিউইয়র্ক টাইমস ইসরাইলি প্রভাবিত সংবাদ কাঠামোর পথ প্রশস্ত করে। পত্রিকাটি প্রথমে গাজায় দুর্ভিক্ষে মৃত্যুপথযাত্রী শিশু মোহাম্মদ জাকারিয়া আল-মাতুকের ছবি প্রধান প্রতিবেদনের জন্য ব্যবহার করে। কিন্তু পরে ইসরাইলি প্রতিষ্ঠান কোগাট (COGAT) জানায়, শিশুটি জন্ম থেকেই সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত। এর পরপরই ইসরাইলি মিডিয়া যেমন আই২৪ ও জেরুজালেম পোস্ট বিষয়টি প্রচার শুরু করে, যেন দুর্বল ও অসহায় মানুষের মৃত্যু কোনোভাবেই দুর্ভিক্ষের প্রমাণ নয়। অল্প সময়ের মধ্যেই নিউইয়র্ক টাইমস ছবির নিচে সংশোধনী যোগ করে লেখে—শিশুটির আগে থেকেই স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল। অথচ তারা উল্লেখ করেনি যে, এই সংশোধনী ইসরাইলি চাপের ফল, কিংবা যে দুর্ভিক্ষ প্রথমেই সবচেয়ে দুর্বলদের প্রাণ কেড়ে নেয়।

তিনি আরও বলেন, অন্য গণমাধ্যমও একই পথে হেঁটেছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) একাধিক দুর্ভিক্ষপীড়িত শিশুর ছবি ছেপে লিখেছে, “গাজায় অপুষ্টি প্রায়ই পূর্ব-বিদ্যমান রোগে তীব্র হয় এবং স্বাস্থ্যসেবা সংকটের কারণে বেড়ে যায়—যা মূলত চলমান যুদ্ধের ফল।”

গোল্ডের মতে, মার্কিন ও ইউরোপীয় গণমাধ্যম এই অস্বীকারধর্মী বয়ান আনন্দের সঙ্গেই পুনরুৎপাদন করছে। এমনকি মার্কিন ডানপন্থি মিডিয়া ফ্রি প্রেস লিখেছে—“গাজার ক্ষুধার প্রতীক যেসব শিশু, তাদের আরও নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যা ছিল।”

তিনি উল্লেখ করেন, একই দিনে যখন আন্তর্জাতিক সংস্থা IPC (Integrated Food Security Phase Classification) গাজা নিয়ে দুর্ভিক্ষের আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট প্রকাশ করে, তখনও সিএনএন সংশ্লিষ্ট শিরোনাম ও ছবির নিচের বয়ান পরিবর্তন করে শিশুদের মৃত্যুকে স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করে।

শেষে গোল্ড বলেন, IPC–এর রিপোর্ট মোকাবিলায় ইসরাইল দুই ধরণের আক্রমণ চালায়:

১. তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদনকে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলে অপবাদ দেওয়া।

২. রিপোর্টের লেখকদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অতীতকে কেন্দ্র করে চরিত্রহনন করা।

এ পর্যায়ে প্রশ্ন জাগে—গাজায় ইসরাইলি অপরাধ ঢাকতে এবং ভুক্তভোগীদের কণ্ঠ দুর্বল করতে এই ধরনের সংবাদ-উপস্থাপনা কি আসলে পরিকল্পিত তথ্যযুদ্ধের অংশ নয়?#

পার্সটুডে/এমএআর/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।