মিশরের আল-আজহারের কে এই শেখ, যার সাথে ইসরায়েল শত্রুতা করছে ?
-
• মিশরের আল-আজহারের শেখ
পার্সটুডে- মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আহমেদ মুহাম্মদ আহমেদ আল-তায়েব হচ্ছেন মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং শিয়া ও সুন্নিদের ঐক্যের নীতিতে বিশ্বাসীদের একজন।
আল-আজহারের শেখ "আহমেদ আল-তায়েব" ১৯৪৬ সালে ৬ জানুয়ারী, মিশরের দক্ষিণাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১০ বছর বয়সে আজহার স্কুলে ভর্তি হন এবং আল-আজহারে তার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামী দর্শনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ফ্রান্সের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ডক্টরেট থিসিসের কিছু অংশ সম্পন্ন করেন। মুহাম্মদ সাইয়্যেদ তানতাভির মৃত্যুর পর তিনি আল-আজহারের ৪৬তম শেখ নির্বাচিত হন এবং ২০১০ সালের ১০ মার্চ থেকে এই পদে অধিষ্ঠিত আছেন। এর আগে তিনি মিশরের গ্র্যান্ড মুফতির পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
আহমেদ আল-তায়েব ইসলামী আকিদা বিশ্বাসের একজন অধ্যাপক যিনি ফরাসি এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই সাবলীল এবং বেশ কয়েকটি ফরাসি অভিধান আরবি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। তিনি পূর্বে ফরাসি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে অধ্যাপনা করেছিলেন। আহমেদ আল-তায়েব মিশরের সাঈদ অঞ্চলের কেনা থেকে এসেছেন এবং একটি সুফি পরিবার থেকে এসেছেন। আল-আজহার পণ্ডিতরা তাকে এমন একজন পণ্ডিত হিসেবে বিবেচনা করেন যিনি কখনও বিতর্কিত বিতর্কে অংশ নেননি বা বিতর্কিত ফতোয়া জারি করেননি।
চিন্তাদর্শন
মিশরের আল-আজহারের শেখ হিসেবে তার প্রথম সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন: আল-আজহারের অন্যতম শক্তিশালী ভিত্তি হলো মধ্যপন্থা, চরমপন্থার বিরোধিতা এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য রক্ষা। কয়েক বছর আগে মিশরের নীল স্যাটেলাইট টিভর সাথে এক সাক্ষাৎকারে, মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি শেখ আহমেদ আল- তাইয়েব শিয়া ও সুন্নির মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকে ইসলামের শত্রুদের মন্দ কাজ বলে মনে করেন এবং এই দুটি ধর্মকে ইসলাম ধর্মের দুটি শাখা হিসেবে বর্ণনা করেন। আহমেদ আল- তাইয়েব বারবার দায়েশ বা আইএস জঙ্গি এবং আল-কায়েদার মতো তাকফিরি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য ফতোয়া জারি করেছেন। ২০১৬ সালে, তিনি আল-আজহারে ধর্মীয় আলোচনার সংস্কার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেন, যার লক্ষ্য ছিল ইসলামের চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করা। ২০১৯ সালে, তিনি পোপ ফ্রান্সিসের সাথে "মানব ভ্রাতৃত্বের নথি" স্বাক্ষর করেন, যেখানে ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
ফিলিস্তিনের সমর্থক
এই মিশরীয় চিন্তাবিদ ফিলিস্তিনি জনগণের সমর্থক এবং গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি অপরাধের প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলের অপরাধের নিন্দা জানিয়েছেন। আল-আজহারের শেখ বিশ্বাস করেন যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচিত জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং বর্তমান আগ্রাসন থেকে আল-আকসা মসজিদকে রক্ষা করা।
শেখ আল-আজহারের সাথে ইসরায়েলের বৈরিতা
ইসরায়েলি দৈনিক "মা'আরিভ" পত্রিকা, সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে মিশরে শেখ আল-আজহারকে "সাপের মাথা" বলে অভিহিত করেছে এবং তাকে অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে। দৈনিকটি ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং মিশরীয় বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এলি ডেকেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে আল-আজহারকে মিশরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বৈরিতা পরিচালনাকারী একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্মকর্তা এবং পশ্চিম এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মোশে আল্লাদও মারিভের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে আল-আজহারের ধর্মগুরুরা, বিশেষ করে শেখ আহমেদ আল- তাইয়েব, মিশরে ইসরায়েল বিরোধী ফ্রন্টে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তিনি আরও বলেন যে প্রায় ১১ কোটি মিশরীয় আল-আজহারের ফতোয়া শোনে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান তীব্রতর হয়েছে এবং আল-আজহার মিশরে একটি সমান্তরাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা পালন করছে।
ইরানের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে আল-আজহার
ইরানের উপর ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সাম্প্রতিক আক্রমণের ব্যাপারে শেখ আল-আজহারও ইসরায়েল বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং এই হামলার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন যে, ইহুদিবাদী ইসরায়েলের দাঙ্গা সমগ্র অঞ্চলে যুদ্ধের বিস্তার ঘটিয়েছে। আহমেদ আল-তাইয়েব শেখ আল-আজহারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ইসরায়েল এই অঞ্চলে একটি ব্যাপক যুদ্ধ শুরু করতে চাইছে, যেখানে রক্ত ও অস্ত্রের ব্যবসায়ী ছাড়া কেউ জিতবে না। এই বিবৃতিতে শেখ আল-আজহার এই অপরাধের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা এবং এই অপরাধ বন্ধে ব্যর্থতাকে এই অপরাধে অংশগ্রহণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তিনি জোর দিয়ে আরো বলেছেন যে এই প্রক্রিয়া সমগ্র বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ হবে, কারণ যুদ্ধ কখনোই কোথাও শান্তি আনতে পারে না।
জার্মানিতে ইরানের রাষ্ট্রদূতের সাথে শেখ আল-আজহারের বৈঠকে মুসলমানদের মধ্যকার সংলাপকে স্বাগত জানান
এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এই বিশিষ্ট মিশরীয় ব্যক্তিত্ব সর্বদা মুসলমানদের মধ্যে সংঘাতের বিরুদ্ধে সতর্ক করে এসেছেন। তিনি জার্মানিতে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত "মাহমুদ ফারাজান্দেহ" এর সাথে এক বৈঠকে জোর দিয়ে বলেন: আজকের মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ এবং বিভাজনগুলো মুসলমানদেরকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে যার বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআন সতর্ক করেছে। এই দ্বন্দ্ব এবং সংঘাত মুসলিম ঐক্য ধ্বংস, মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন এবং একটি ঐক্যবদ্ধ মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গি এবং লক্ষ্যের অভাবের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তার মতে, বর্তমান যুগে সবচেয়ে বিপজ্জনক চ্যালেঞ্জ হল রাজনীতিবিদ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের কীভাবে বোঝানো যায় যে মুসলমানদের সুবিধা এবং কল্যাণ সবকিছুর উপরে এবং সমস্ত মুসলমানকে এতে একমত হতে হবে।#
পার্সটুডে/এমআরএইচ/২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।