সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১ ১৮:২৯ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহর আসমাউল হুসনার অন্তর্ভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হ'ল ওয়াসিই। সুরা আসরার ১১০ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে: যখন মুশরিকরা মহানবীর (সা) কাছে শোনেন যে তিনি বলছেন: ইয়া আল্লাহ! ইয়া রাহমান! তখন মুশরিকরা পরিহাস করে বলে, উনি আমাদেরকে কয়েক খোদার ইবাদত করতে নিষেধ করেন অথচ নিজেই অন্য উপাস্যকে ডাকছেন।

আর এরই প্রেক্ষাপটে নাজিল হয় এই আয়াত। কয়েক খোদার ইবাদতের অনুমান নাকচ করে দিয়ে  মহান আল্লাহ এ আয়াতে বলছেন:  হে নবী! আপনি বলুন: আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, তাঁর পবিত্র সত্তা একই এবং সব সুন্দর নাম তাঁরই।–

-এই নামগুলো মহান আল্লাহর নানা গুণের স্মারক হিসেবে তাঁর একক সত্ত্বার পরিচয়ই তুলে ধরে। এইসব নাম মহান আল্লাহর একক সত্ত্বার অশেষ পূর্ণতাগুলোরই সংক্ষিপ্ত সংকেত।  মহান আল্লাহর এমনই এক নাম হল ওয়াসিই। এই নাম পবিত্র কুরআনে নয় বার এসেছে। এর মধ্যে সাত বার এসেছে আলিম নামের সঙ্গে এবং একবার এসেছে হাকিম নামের সঙ্গে। ওয়াসিই নামের অর্থ প্রসারিত। মহান আল্লাহর জ্ঞান, ক্ষমতা, রহমত ও অনুগ্রহ সবই অশেষ প্রসারিত। সংকীর্ণ শব্দের বিপরীত অর্থবোধক হচ্ছে প্রসারিত শব্দটি।  যিনি কোনো অভাবের ও ঘাটতির বা ত্রুটির শিকার নন তার জন্যই এই নাম প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ পরিপূর্ণরূপে অভাবহীন ও পর-নির্ভরতা থেকে মুক্ত। তাই তিনি বিনা হিসেবে তথা যত খুশি দান করতে পারেন ও তাতে তার বিন্দুমাত্রও কিছু কমে না।

-মহান আল্লাহই হচ্ছেন চরম ধনী যিনি সব ধরনের দারিদ্র ও অভাব মোচন তথা সব ধরনের চাহিদা মেটান। একইভাবে তিনি জ্ঞান ও রিজিকও ব্যাপক মাত্রায় বাড়িতে দিতে পারেন। সুরা বাকারার ১১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

-পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।

-আসলে কোনো স্থান ও কোনো কিছুই আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহের আওতামুক্ত নয়। তাই মানুষ যেদিকেই মুখ ফেরাক না কেন ও যে জিনিসেরই সন্ধান করুক না কেন ওয়াসিই হিসেবে মহান আল্লাহ তা জানেন। অন্য কথায় ওয়াসিই বলতে বোঝায় মহান আল্লাহর অস্তিত্ব রয়েছে সবখানে ও সব কিছুকেই তিনি পরিবেষ্টন করে আছেন।

-মহান আল্লাহ ওয়াসিই ও সর্বশক্তিমান বলে তিনিই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন ব্যাপক মাত্রায়। এটা মহান আল্লাহরই দয়া ও অনুগ্রহ। সুরা নিসার ৯৭-নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

-যারা নিজের অনিষ্ট করে, ফেরেশতারা তাদের প্রাণ হরণ করে বলে, তোমরা কি অবস্থায় ছিলে? তারা বলে: এ ভূখণ্ডে আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতারা বলে: আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত বা ওয়াসিই ছিল না যে, তোমরা দেশত্যাগ করে সেখানে চলে যেতে? অতএব, এদের বাসস্থান হল জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত মন্দ স্থান বা মন্দ পরিণতি। ওয়াসি বা ব্যাপক প্রসারিত অর্থের সমার্থক শব্দ ব্যবহার করে সুরা তালাকের ৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

-বিত্তশালী ব্যক্তি তথা যার ব্যাপক ধন রয়েছে সে তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। ওয়াসির সমার্থক শব্দ ওয়াসিয়া ব্যবহার করে মহান আল্লাহ সুরা বাকারার২৫৫ নম্বর বাক্যের একাংশে বলেছেন: তাঁর আসন আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে বিস্তৃত।

-ওয়াসিই বলতে সূক্ষ্ম অর্থে বলা যায় যে যিনি ওয়াসিই তিনি নিজের মধ্যে সব কিছুর ঠাঁই দিতে পারেন ও সেসবকেই ঘিরে রাখতে পারেন। মানুষের আত্মা হতে পারে আকাশ ও জমিন থেকেও প্রশস্ত। মহানবীর হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ বলছেন: আকাশ এত প্রশস্ত হয়েও ও জমিন এত বিশাল হয়েও আমাকে ধারণ করতে পারে না, কিন্তু মুমিনের হৃদয় আমাকে ধারণ করার বা পাওয়ার মত প্রশস্ততা রাখে।– অন্য কথায় আত্মা প্রশস্ত হলেই তাতে  খোদার প্রেম ও পরিচয় বা খোদা সম্পর্কিত জ্ঞানের স্থান হয়। আর জমিন ও আকাশ বড় হলেও সেই ক্ষমতা রাখে না।

-মানুষ যদি মহান আল্লাহর ওয়াসিই নামের রঙে রঙ্গিন হয় তাহলে সে কোনো ধরনের অচলাবস্থা ও সংকীর্ণতার মধ্যে আটকে থাকে না। সে আল্লাহকে সব মুহূর্তে সবখানেই পায় ও সবখানেই সে আল্লাহর প্রজ্ঞা, ক্ষমা ও রহমত দেখতে পায়। তার অভিধানে হতাশা নামের কোনো শব্দ নেই। আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে হতাশা হচ্ছে সবচেয়ে বড় গোনাহ। ইমাম সাজ্জাদ বলেছেন, যে মুক্তি পেয়েছে তার বিষয়টি কোনো বিস্ময়ের ব্যাপার নয় বরং মহান আল্লাহর অশেষ রহমত সত্ত্বেও যে ধ্বংস হয় তার ব্যাপারটিই বিস্ময়কর।

- বলা হয় মহান আল্লাহর শিরক করা তথা আল্লাহর একত্ববাদের বিপরীতে আল্লাহর সত্ত্বার বা ক্ষমতার অংশে  কাউকে শরিক করার মত বড় পাপ আর নেই। কিন্তু তওবা করলে আল্লাহ তাও ক্ষমা করেন। তাই অতীতে মানুষ যত বেশি পাপ ও মন্দ কাজে জড়িত হোক না কেন তওবা করলে আল্লাহ অশেষ ক্ষমাশীল বলে ক্ষমা করে দিবেন। মহান আল্লাহ (সুরা নায্‌ম্‌-এর ৩২ নম্বর আয়াতে) বলেছেন: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহর ক্ষমা ব্যাপক ও বিস্তৃত।

-একবার হযরত জিবরাইল ফেরেশতা মহানবীর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার হিসেবে কয়েকটি বাক্য আসার কথা জানিয়ে ওই বাক্যগুলো তুলে ধরেন। ওই বাক্যগুলোকে তিনি বেহেশতের অন্যতম সম্পদ বলে উল্লেখ করেন। ওই বাক্যগুলো ছিল এরূপ:

-হে তুমি যে সৌন্দর্যকে প্রকাশ কর ও অসুন্দরকে ঢেকে রাখ, হে খোদা যে তুমি পাপের কারণে পাকড়াও কর না, পাপীর পর্দা ছিন্ন কর না, হে অত্যন্ত বড় ক্ষমাশীল, হে খোদা তুমি মন্দ কাজগুলোকে পরিণত কর পুণ্যে, হে তুমি যার ক্ষমা অত্যন্ত ব্যাপক বা বিস্তৃত, হে খোদা  তোমার হাতগুলো খুলে দেয় বা ছড়িয়ে দেয় অপার দয়া ও অনুগ্রহ, হে তুমি যে সব গোপন বিষয় জানো, হে সব প্রার্থনা ও আশার আশ্রয়স্থল, হে তুমি যে দয়ার বশে সব গোনাহ বা পাপ মোচন করে দাও, হে তুমি যে ব্যাপক অনুগ্রহ বা করুণা করেছ তোমার দাসদের এবং যোগ্যতা অর্জন না করতেই তুমি তাদের সব নেয়ামত দান করেছ। হে প্রতিপালক, হে মালিক, হে প্রভু! হে আমাদের সব আশা-ভরসার কেন্দ্রবিন্দু বা শেষ আশ্রয়-স্থল, হে ফরিয়াদে সাড়া দান কারী মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের ওপর দরুদ পাঠান। তুমি আমাদের চেহারাকে আগুন দিয়ে পুড়ে কুৎসিত ও কদর্য করে দিও না!-

-এই দোয়া পাঠের সাওয়াব কত জানতে চাইলে জিবরাইল মহানবী (সা)কে বলেন: কার সাধ্য আছে এর সাওয়াব গণনার? সাত আকাশ ও সাত জমিনের সব ফেরেশতাও যদি এই দোয়া পাঠের সাওয়াব গুণতে থাকে তাহলেও কিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করেও এ দোয়ার কেবল একটি অংশের সাওয়াবও গুণে শেষ করতে পারবে না! যখন বান্দাহ এই দোয়ার মধ্যে থাকা ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাত  নামক বাক্যাংশটি বলবে তখন আল্লাহ তার ওপর রহমতের সত্তরটি দুয়ার খুলে দিবেন ও তাকে নিজ রহমতের দরিয়ায়  সেই সময় পর্যন্ত নিমগ্ন করবেন যতদিন না সে মৃত্যু বরণ করে।  ..... তাই হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এই দোয়া খোদাভীরুদের শিখিয়ে দিন । এ এমন এক দোয়া যা পড়ার মাধ্যমে যে কেউ কোনো দোয়া করলে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তা অবশ্যই কবুল হবে। #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।