স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী
তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রপতি, লাল গালিচা সংবর্ধনা
-
তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল ভারতের রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা পৌঁছেছেন। আজ (বুধবার) সকাল সোয়া ১১টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিশেষ উড়োজাহাজে করে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
করোনা মহামারি শুরুর পর এটাই ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। তাঁর সঙ্গে ভারতের ফার্স্ট লেডি, রাষ্ট্রপতির কন্যা, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, দুইজন সংসদ সদস্য এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সফরসঙ্গী হয়ে এসেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল দেয় গার্ড অব অনার। দেওয়া হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা।
গার্ড পরিদর্শন শেষে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে লাইন অব প্রেজেন্টেশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
কূটনৈতিক কোরের ডিন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, আইজিপিসহ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন বিমানবন্দরে।

এরপর দুপুর পৌনে ১টার দিকে তিনি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা জানানোর পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান। শহীদদের প্রতি সামরিক কায়দায় সশস্ত্র সম্মান জানায় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল। এ সময় বেজে ওঠে বিউগলের করুণ সুর।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ। সই করেন স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইয়ে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সহধর্মিণী সবিতা কোবিন্দ ও কন্যা স্বাতি কোবিন্দ।
এরপর তিনি ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।
ঢাকা সফরকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষের সমাপনী দিন ও বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিনি সন্ধ্যায় যাবেন বঙ্গভবনে, সেখানে দুই প্রেসিডেন্টের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। এ ছাড়া, মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশকে উপহার দেবেন ভারতের প্রেসিডেন্ট।
সফরের দ্বিতীয় দিন ১৬ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে সকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতীয় কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এদিন বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের সাউথ প্লাজায় বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক মুহূর্তে (৪টা ৩১ মিনিট) বঙ্গবন্ধুর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং রক্তস্নাত বিজয়ের আবেগ ও আনন্দ উদযাপনের জন্য আয়োজিত ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।
ভারতীয় প্রেসিডেন্টের সফরে কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে-এ প্রসঙ্গে তুরস্ক সফরে থাকা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নেতাদের মধ্যে যখন সাক্ষাৎ হয়, তখন সব ধরনের সমস্যা নিয়েই কথা হয়। যদিও ভারতের প্রেসিডেন্ট একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসছেন তথাপি বিদ্যমান ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত থাকা পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ সময় বলেন, এবারের সফরে কোনো চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে না। তবে ভারতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে।
সফরের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত রমনা কালী মন্দিরের সদ্য সংস্কারঅকৃত অংশের উদ্বোধন করবেন এবং মন্দিরটি পরিদর্শন করবেন। এরপর দুপুরে তিনি দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।#
পার্সটুডে/আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান/১৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।