করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত ২৩.৫০% স্বাস্থ্যকর্মী মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ২৩.৫০% স্বাস্থ্যকর্মী পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) ভুগছেন।
মানসিক সমস্যায় ভুক্তভোগী স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন চিকিৎসকরা। এরপরে রয়েছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং নার্সরা। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস) অর্থায়নে পরিচালিত একটি সরকারি গবেষণা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
“বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীকালে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর এর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব, কুশলাবস্থা, সংশ্লিষ্ট ফ্যাক্টরসমূহ এবং মানিয়ে নেবার কৌশল” শিরোনামে এ গবেষণার ফলাফল গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) ।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অন্তত এক মাস কোভিড আক্রান্ত রোগীদের সঙ্গে কাজ করেছেন এমন ১,৩৯৪ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর গবেষণাটি চালানো হয়। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে গবেষণায় অংশ নেওয়া স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের মধ্যে ২৪.৩০% চিকিৎসক, ২৩.৫০% মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং ২২.৮০% নার্স মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ৬২.৯% নারীই পিটিএসডি নামক সমস্যায় ভুগছেন এবং তাদের মধ্যে ৮৩.৬% বিবাহিত।
গবেষণায় অংশ নেওয়া অধিকাংশই মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং অনেকেই নিদ্রাহীনতায় ভুগছিলেন। অধিকন্তু, পরিবার এবং আত্মীয়দের নিয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের আরও মানসিক চাপের মধ্যে রেখেছিল। গবেষণায় অংশ নেওয়া একজন বলেন, “সংক্রামক রোগ হওয়ায় রোগীদের মতো আমাদেরও একই ভয় ছিল। অনেক কিছুই আমাদের কাছে ছিল অজানা।”
অংশ নেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ভাষ্যমতে, হাসপাতালগুলোও এই ধরনের নতুন রোগের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত ছিল না। রোগী, গণমাধ্যম ও গণমানুষসহ সমাজের নেতিবাচক মনোভাবের পাশাপাশি কাজের সময় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি আমাদের মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত প্রার্থনা, টিভি দেখা, বই পড়ার মতো কার্যক্রমে সময় ব্যয় করতেন, যাতে পিটিএসডির প্রভাব কম থাকে।
গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করে নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, “পিটিএসডি আক্রান্ত স্বাস্থ্যসেবা পেশাদাররা সবার থেকে দূরে সরে থাকতে পারেন বা চাকরি ছেড়ে দিতে পারেন বা তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকতে পারে।” এমনকি ট্রমা মোকাবিলার জন্য অনেকে ধূমপান বা ঘুমের ওষুধও সেবন করেছিলেন বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ স্বাস্থ্যগত সমস্যাটির সমাধান করা। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের উচিত পেশাদার বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া।
তিনি জানান, যেহেতু গবেষণাটি গত বছর পরিচালিত হয়েছিল, তাই এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন কী অবস্থায় আছেন, তা জানার কোনো উপায় নেই। এ প্রসঙ্গে ডক্টরস প্লাটফর্ম ফর পিপলস হেলথ এর আহবায়ক প্রফেসর ডাঃ রশিদ-ই মাহবুব রেডিও তেহরানকে বলেন, কোভিড যোদ্ধা খ্যাত সেসব চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মী মহামারী মোকাবেলা করে মানুষের জীবন বাচঁতে গিয়ে নিজেদের জীবন দান করেছেন তাদেরকে আমরা মার্যাদা বা সন্মান দিতে পারিনি এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। এসব সন্মুখযোদ্ধাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান নিসপমেের গবেষকগণ যে প্রতিবেদন তৈরী করেছে তাকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি এর পরামর্শগুলি বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা কামনা করেন। বাংলাদেশ মেডিক্যাল আসসিয়েশনের তথ্য মতে দেশের প্রায় দু’হাজার চিকিৎসক জীবন হারিয়েছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে। কোভিড যুদ্ধে ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল প্রথম শহীদ হন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের এক সহকারি অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দীন আহমেদ।
এ ছাড়া গত ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় দশ হাজার ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্ব মহামারির কোভিড মোকাবেলায় নিয়োজিত সারির যোদ্ধা-চিকিৎসক নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রনোদনা বা ক্ষতিপুরনের সরকারী ঘোষণা থাকলেও তা যথাযথভাবে কার্যকর হয়নি বলে আভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট মহল। #
পার্সটুডে/ আব্দুুর রহমান খান/ বাবুল আখতার/২৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।