কথাবার্তা: ধর্ষণ কাণ্ডে উত্তাল বাংলাদেশ ও ভারত, একদিকে বেগমগঞ্জ অন্যদিকে হাথরস
শ্রোতাবন্ধুরা! ৫ অক্টোবর সোমবারের কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।
বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খবরের শিরোনাম:
- জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর-প্রতিদিন ৩টির বেশি ধর্ষণের ঘটনা-প্রথম আলো
- সৌদি নিয়োগকর্তাদের দিকে তাকিয়ে প্রবাসীরা-ইত্তেফাক
- স্বাস্থ্যের গাড়িচালক মালেক কারাগারে-কালের কণ্ঠ
- ধর্ষণের প্রশ্রয়দাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে: কাদের-যুগান্তর
- ফেসবুকে না ছড়ালে তো ঘটনা গোপনই থাকতো: হাইকোর্ট -বাংলাদেশ প্রতিদিন
- যেকোনো ধরনের শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে: প্রধানমন্ত্রী-সমকাল
- ধর্ষিত দেশে কিছুই হয় না নারীর রক্ষাকবচ –ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা-মানবজমিন
এবার ভারতের কয়েকটি খবরের শিরোনাম:
- ছক কষে খুন করা বন্ধ হোক’, বিজেপি নেতাদের সুরেই টুইটে ফের রাজ্যকে খোঁচা ধনকড়ের -সংবাদ প্রতিদিন
- ভণ্ডামি বেরিয়ে পড়েছে’, হাথরস-কাণ্ডে নীরবতা নিয়ে মোদীকে বিঁধলেন অধীর-আনন্দবাজার পত্রিকা
- ‘সাহস কী করে হয়?’ প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে অভব্য আচরণ নিয়ে পুলিশকে তোপ বিজেপি নেত্রীর -আজকাল
শিরোনামের পর এবার দুটি বিষয়ের বিশ্লেষণে যাব।
কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:
১. বাংলাদেশের নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে প্রতিবাদ হচ্ছে। একই ধরনের সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এ ঘটনা ঘটলো। সমাজের এই চিত্রকে আপনি কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
২. ইয়েমেনের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারিয়ি গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যে, ইহুদিবাদী ইসরাইল শুধু বাবুল মান্দেব প্রণালীর নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় নি বরং তারা ইয়েমেনের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, নিরাপত্তা এবং সামরিক খাত নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। এজন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর সময় সানা-তেল আবিব গোপন সম্পর্ক ছিল। কী বলবেন আপনি?
বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

‘আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাই’দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার ‘মত মতান্তরে’ওমার শরীফ লিখেছেন,বার কয়েক চেষ্টা করেছি। ভিডিওটি দেখে শেষ করতে পারিনি। এ অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই। অস্বীকার করার জো নেই, এটাই সময়ের বাস্তবতা। ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। আমাদের মস্তিষ্ক তা নিতে পারছে না। দেখে ওঠার সাহস করছে না। কিন্তু এটাও সত্য, আমাদের দীর্ঘ নীরবতাই তৈরি করেছে এই ধরনের বাস্তবতা। ঘটনাটি ৩২ দিন আগের। না, কোনো সংবাদমাধ্যম এ নিয়ে কোনো রিপোর্ট করেনি।
প্রায়শ’ই আপনি শুনতে পাবেন হাজার হাজার অনলাইন, পত্রিকা আর টেলিভিশন চ্যানেলের কথা। কিন্তু এর প্রায় সবই যে সংবাদমাধ্যম নয়, কেবল প্রচারমাধ্যম তা আরো একবার খোলাসা হয়ে গেলো। শত শত বছর ধরে গ্রামীণ জনপদে একধরনের স্থানীয় বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও তার সমালোচনা অনেক। কিন্তু কখনো কখনো এটা কার্যকরও বটে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এই বর্বরতায় দেখা গেলো স্থানীয় মুরব্বীরাও কোনো ভূমিকা রাখেননি। তারা কি অসহায়, না তারাও এই সিস্টেমের অংশ সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। পুলিশ এবং প্রশাসন সবাই ছিল নীরব। কেউ কিচ্ছু জানতো না।
এতোদিন পর ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। অপরাধীরা গৃহবধূকে তার ঘরে বিবস্ত্র করে নির্যাতন আর ধর্ষণচেষ্টা করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা তার ভিডিও ধারণ করে। চাঁদা দাবি করে। বিচার চাওয়াতো দূরের কথা ওই গৃহবধূকে পালিয়ে নিজের জীবন রক্ষা করতে হয়। এখন ভিডিও দেখে প্রশাসনের টনক নড়েছে। ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। খুব দ্রুতই আসামীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু কে না জানে এসবই হচ্ছে মলম দিয়ে ক্যানসার সারানোর চেষ্টা। কেন এতোদিনে মামলা হয় না, কেন নির্যাতিতা কে পালিয়ে বাঁচতে হয় একটি স্বাধীন দেশে সে প্রশ্নের জবাব খোঁজা হচ্ছে সামান্যই।
যদিও ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবার কথায় এই প্রশ্নের উত্তর অনেকটাই পাওয়া যায়। ওই গৃহবধূর বাবা জানান, আমি নিরীহ লোক। সন্ত্রাসীদের ভয়ে কোনো কথা বলার সাহস পাই না। আমি শুধু আল্লাহর কাছে বিচার চাই। (সূত্র: জাগো নিউজ)। গতকালই প্রথম আলোয় পড়ছিলাম এক বাবা বলেছেন, ভাইরাল হয়নি তাই বিচার পাইনি। ৬০৪ দিন হলো। তার সন্তান মারা যান বাসচাপায়। কিন্তু ভাইরাল না হওয়া, কোনো আন্দোলন না হওয়ায় তিনি কোনো বিচার পাননি।
এই যখন অবস্থা তখন সুবর্নচরের সেই গৃহবধূর কথা কি আমাদের মনে আছে। প্রভাবশালীদের কথা অমান্য করে ভোট দেয়ায় কী ভাগ্য তাকে বরণ করতে হয়েছে। সর্বশেষ সিলেটের ঘটনা এখনো মিইয়ে যায়নি। এ এক মেগাসিরিয়াল। যার কোন শেষ নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই পরিস্থিতি? কেন প্রতিটি ঘটনাতেই মানুষকে রাস্তায় নামতে হবে? কেন ফেসবুকে ভাইরাল করে বিচার দাবি করতে হবে? কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলবে। সবচেয়ে সংক্ষেপে এর উত্তর হচ্ছে ইনসাফের ঘাটতি। একধরনের প্রভাবশালীরা যারা মনে করেন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানা কারণে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা তা থাকেনও। সংবাদমাধ্যম তাদের ঘাটায় না। কখনো ইচ্ছায়, কখনো অনিচ্ছায়। বিবেক বিক্রি হয়ে যাওয়া সময়ে এটা নির্মম বাস্তবতা। এখানে সবকিছু মাপা হয় দল আর ব্যক্তিপূজার নিরিখে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বা ধবংসে ব্যক্তির ভূমিকার থেকে বেশি গুরুত্ব পায় কে কার কাছ থেকে কীভাবে সুবিধা পেলেন তা। সমাজ, পুলিশ, প্রশাসন কেউই এর বাইরে নয়। আইনের লম্বা হাত অসহায়ভাবে দেখে অপরাধীরা হেটে বেড়াচ্ছে বীরদর্পে। এই অনাচার আর অব্যবস্থার সহজ সমাধান একটাই- ইনসাফ, ইনসাফ এবং ইনসাফ।
গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন-প্রধান আসামি বাদলসহ গ্রেপ্তার ৪-দৈনিক মানবজমিন
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে স্বামীকে বেঁধে রেখে বিবস্ত্র করে এক গৃহবধূর ওপর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি বাদল বাহিনীর প্রধান বাদল ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, রোববার রাতে বাদলকে ঢাকা থেকে এবং দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জ থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে রোববার বিকাল ৪টায় একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে মো. আবদুর রহিম (২০) ও রাতে একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আবদুর রহিমের ছেলে মো. রহমত উল্যাহকে (৪১) গ্রেপ্তার করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২রা সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে ওই গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।
নির্যাতনের ঘটনার ৩৩ দিন পর ৯ জনকে আসামি করে রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন নির্যাতিতা গৃহবধূ (৩৫)।
ধর্ষণের প্রশ্রয়দাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে: কাদের-দৈনিক যুগান্তর
ধর্ষণে প্রশ্রয়দাতাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা এবং দফতরপ্রধানের সঙ্গে উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সমাজবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। দেশের সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ চলাচল এবং নারীর প্রতি সহিংসতা ও নিন্দনীয় অপকর্ম রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। অপরাধীদের প্রশ্রয় না দিয়ে আইনের আওতায় আনতে সহযোগিতা করুন। প্রশ্রয়দাতাদেরও আইনের আওতায় আনব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ধর্ষণ নিঃসন্দেহে একটি নিন্দনীয় অপরাধ এবং সামাজিক ব্যাধি। এসব চরম ঘৃণীত কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা বিকৃত রুচির অপরাধী। সরকার এ ধরনের প্রতিটি অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির বিধান করছে।
মন্ত্রী বলেন, তবু কোথাও না কোথাও এ অপরাধ ঘটছে। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী দেশে ধর্ষণের মতো ঘটনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ ধরনের সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সব ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করার কোনো প্রয়োজন নেই। অন্তত এ ধরনের একটি ইস্যু নিয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলো, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন— সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ধর্ষণের সঙ্গে সরকারি দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের নাম আসছে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সেতুমন্ত্রী বলেন, যেই হোক; এটার দায় কেউ এড়াতে পারবে না। সরকার ক্ষমতায়, সরকার কীভাবে দায় এড়াবে? সরকার এটাকে আবার প্রশ্রয়ও দিচ্ছে না। প্রত্যেকটি ব্যাপারে সরকার দায়িত্ব নিচ্ছে এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দিয়ে এসব ঘটনায় যারাই জড়িত থাক, আমাদের দলীয় পরিচয়েও কেউ যদি থাকে, অবশ্যই তাকে আইনের আওতায়, শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সেটা শুধু মুখে বলা হচ্ছে না, বাস্তবেও কার্যকর করা হচ্ছে।
দৃশ্যমান কোনো শাস্তি কিন্তু দেখা যাচ্ছে না— এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোনটা হয়নি? রিফাত হত্যার রায় সেদিন তো হয়ে গেল। ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ড, সেটিরও তো রায় হলো। এগুলো তো হচ্ছে। সব ব্যাপারেই শাস্তি হবে। ইউএনও ওয়াহিদার ওপর যে হামলা হয়েছে, সেই ব্যাপারেও তো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দলীয় পরিচয়ের নামও শোনা গেছে, কিন্তু কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ডে যারা আসামি, তাদের প্রত্যেকেই ছাত্রলীগ পরিচয়ের, তাদের কি অব্যাহতি দেয়া হয়েছে? নাকি চার্জশিট থেকে বাইরে রাখা হয়েছে?
জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর-প্রতিদিন ৩টির বেশি ধর্ষণের ঘটনা-দৈনিক প্রথম আলো
দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর—এই নয় মাসে প্রতিদিন গড়ে তিনটির বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নয় মাসে মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মনে করেন, ‘যদি আইনের শাসন বড্ড দুর্বল হয়ে যায় তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকে। দেশে আইনের শাসন দুর্বল হয়ে গেছে। দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণ হলো প্রভাবের একটি বলয় তৈরি হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার আইনের শাসনকে কোনঠাসা করে ফেলেছে।’গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রাবাস দখল করে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচিতি ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। এ পর্যন্ত অভিযুক্তদের সকলেই ধরা পড়েছেন। এই ঐতিহ্যবাহী কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক তরুণীর ধর্ষণের ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার পরপরই নোয়াখালীর এক গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটল। আজ এ পর্যন্ত মোট চারজন এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে। ওই নারী নয়জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন।
আসকের হিসাবে চলতি বছর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন নারী। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন নারী। আর আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী।আসকের হিসাবে চলতি বছর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২০৮ জন নারী। এছাড়া ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৩ জন নারী। আর আত্মহত্যা করেছেন ১২ জন নারী।
আসকে তথ্য অনুযায়ী, গত নয় মাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬১ নারী। এর মধ্যে যৌন হয়রানরি কারণে ১২ নারী আত্মহত্যা করেছেন। আর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিন নারী এবং ছয় পুরুষ নিহত হয়েছেন।
দৈনিকটির অন্য একটি খবরের শিরোনাম-‘এ লজ্জা কোথায় রাখি? কোন সমাজে আমাদের বসবাস?’ এতে লেখা হয়েছে,নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ৩৭ বছর বয়সী এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও নিয়ে সরব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি তাদের কণ্ঠে। মূল ধারার গণমাধ্যমের পাঠকেরাও তীব্র নিন্দা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মন্তব্যের ঘরে।
ফয়জুল্লাহ আমান নামের এক পাঠক প্রথম আলোর এ সংক্রান্ত সংবাদে মন্তব্য করেছেন, ‘এ লজ্জা কোথায় রাখি? কোন সমাজে আমাদের বসবাস? পশুও আমাদের দেখে মুখ লুকোবে।’ মাহমুদ করিম নামের আরেক পাঠক বলেছেন, ‘দ্রুত বিচার করে তা কার্যকর করতে হবে। মানুষ বিচার না পেয়ে অসহায় বোধ করছে। বিচারের আশাও বোধ হয় এখন আর কেউ করে না! এই অবস্থার নিরসন দরকার।’ মুজাহিদ খান নামের এক পাঠক প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে কে? একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলছে। আমাদের নৈতিকতা বিবেক আজ কোথায়?’
বেগমগঞ্জের সেই নারী: পোড়াচোখে এ কী দেখলাম?-ফারুক ওয়াসিফ
‘ভাই মাফ করেন, আমি বাচ্চার মা’। এই শুনে আসমান কেঁপে যাচ্ছে, কিন্তু রাষ্ট্রের পাষাণ মন অবিচল। গাড়ি চলছে, ঘোড়া চলছে, টেলিভিশন রঙ ছড়াচ্ছে। বেগমগঞ্জের সেই নারী, সেই মা, সেই স্ত্রী নির্যাতকদের পায়ে–পায়ে ঘুরে বলছে, ‘আমার মেয়েটা ছোট, ওরে অন্তত ছেড়ে দ্যান’। পাড়া-প্রতিবেশী তখন দুয়ার আটকে চুপ! ফেসবুকে যখন ‘চ্যালেঞ্জিং টাইমসের’ সেলিফসহ কতরকম চ্যালেঞ্জের মচ্ছব, তখন হায়েনার দল নারীমাংস ছিঁড়ে খাচ্ছে আর উল্লাস করছে। মরবার আগপর্যন্ত মানুষ বাঁচার চেষ্টা করে। বাঁচার চেষ্টায় ওই নারী কী–না করে গেলেন কিন্তু বাাঁচাবার কোনো হাত পাওয়া গেল না। আজ বেগমগঞ্জ, গতকাল সিলেট, তার আগে খাগড়াছড়ি, তার আগে খুলনা, তার আগে বগুড়া—কোথায় না? রাজধানী কত স্বাভাবিক। ‘চলো বন্দু ঘুরে আসি’ মেজাজে চলছে সবকিছু।
৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে যেন ধর্ষণের উৎসব, নারীর চিৎকার, শিশুর চিৎকার, মায়ের কান্না, অসহায় বাবার কলিজাফাটা আর্তনাদ। সেই আর্তনাদ কুতুব মিনারের বাসিন্দাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। তাঁদের দিলে বিবেকহীনতার মোহর মারা। তবুও নারকীয় দৃশ্যের জন্ম হয়। ফেসবুকে-ইউটিউবে ছড়িয়ে যায় নারী নামের হরিণ শিকারের দৃশ্য। শিকারিদের বর্বর উল্লাস। সেই দৃশ্য দেখা যায় না, সেই কান্না শোনা যায় না, সেই উল্লাসে স্বাভাবিক প্রতিটি মানুষের অন্তরাত্মা ফুঁসে ওঠে ক্রোধে, হাহাকারে, বোবা যন্ত্রণায়। প্রতিটি লোমকূপে আগুন ধরিয়ে দেয় সেসব দৃশ্য। দৃশ্যগুলো তাড়াতাড়ি ঢেকে দেওয়া হয়, নির্যাতিতা মুখ লুকিয়ে ফেলেন, চলে যান অজ্ঞাতস্থানে। কিন্তু আমাদের ভুলে থাকার সাধনার দেয়ালে সেসব ছবি ফিরে আসে, ভেসে ওঠে মনের পর্দায়। এ যেন আগেকার দিনের বোবা চলচ্চিত্র। পর্দায় মানুষের কান্নার মুখভঙ্গি দেখি কিন্তু শুনি উৎসবের মিউজিক। উন্নয়নের ব্যান্ডপার্টির অর্কেস্ট্রায় ঢাকা পড়ে নির্যাতিতার ফরিয়াদ।
সেই ফাঁকে ধর্ষক–নির্যাতকেরা বুক ফুলিয়ে হাঁটে। জনমতের মধ্যে তাদেরই ভাইবেরাদরেরা দোষ ধরে নারীদের পোশাকের, চালচলনের। সবাই ধর্ষক–নির্যাতক নয়। কিন্তু এত এত মানুষের মনে নারীবিদ্বেষ, এত হিংসার প্রচার, এত পুরুষালি আগ্রাসী মনোভাব। কোনো নারীর পেটের সন্তান ধর্ষক হয়ে জন্মায় না। ধর্ষকের জন্ম নারীবিদ্বেষের এই সংস্কৃতির ঔরসে, রাষ্ট্রীয় দায়মুক্তির ছাতার তলে, দুর্বৃত্ত রাজনীতির খামারে। ধর্ষকের মানসিক প্রশিক্ষণ দেয় যৌনায়িত হিন্দি মিডিয়া। সপরিবারে সেসবও দেখতে হয়।
এ এমন এক সময়, যখন জনগণের জনগণ ছাড়া আর কেউ নেই। সেই জনগণও পাশবিক ধর্ষকদের ক্ষমতার ভয়ে ‘দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া’ দশায় দিনাতিপাত করেছে। এক দিন নয়, দশ দিন নয়, বছরের পর বছর সয়ে যেতে হচ্ছে। আর কখন এমন অসহায়ত্বের লোমশ থাবার মধ্যে আমরা অবশ হয়ে ছিলাম? আর কখন ভাই হয়ে বোনের, মা হয়ে মেয়ের, বাবা হয়ে সন্তানের ওপর চলা বীভৎস নির্যাতন দেখে যেতে হয়েছে?
সৌদি নিয়োগকর্তাদের দিকে তাকিয়ে প্রবাসীরা-দৈনিক ইত্তেফাক
বৈশ্বিক করোনায় দেশে আটকে পড়া সৌদি প্রবাসীদের কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে অচলাবস্থা কাটছে না। দিন যত যাচ্ছে ক্রমেই বাড়ছে সংকট। গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তারা গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসে সমস্যা নিরসনের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। গতকালও টিকিট-টোকেন ও চাকরি বাঁচানোর দাবিতে সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের সামনে জমায়েতকালে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হন প্রবাসীরা। এসময় নারী প্রবাসীসহ আহত হন অনেকে। টিকিট-টোকেন নিতে ভেতরে ঢুকতে না পেরে হোটেল সোনারগাঁওয়ের গেট ভাঙচুর করেন প্রবাসীরা। পরে বিকাল পর্যন্ত অবরোধ করেন তারা। নানা আশ্বাস দিয়েও মানানো যাচ্ছে না কারওয়ান বাজারে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ও মতিঝিলের বিমানের টিকিটের জন্য অপেক্ষারত প্রবাসীদের। সচিবালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ করেছেন তারা। তাদের সকলের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
স্বাস্থ্যের গাড়িচালক মালেক কারাগারে-দৈনিক কালের কণ্ঠ

অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকা উদ্ধারের মামলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক আব্দুল মালেকের জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরির আদালত এ আদেশ দেন।
এর আগে রিমান্ড শেষে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অপর দিকে তার আইনজীবী জি এম মিজানুর রহমান তার জামিন চেয়ে আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকা উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা পৃথক দুই মামলায় তার সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তুরাগের কামারপাড়ার ৪২ নম্বর বামনের টেক হাজী কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি গুলি, দেড় লাখ টাকার জালনোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তুরাগ থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
ভারতের কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:
ভণ্ডামি বেরিয়ে পড়েছে’, হাথরস-কাণ্ডে নীরবতা নিয়ে মোদীকে বিঁধলেন অধীর-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
হাথরস-কাণ্ডে ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা দেশ। অথচ সে বিষয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি প্রধান সেবক। তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করলেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। তাঁর কথায়, হাথরসের ঘটনায় ভণ্ডামি ধরা পড়া গিয়েছে।

রবিবার রাতে হাথরসের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অধীর। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘এত দিন দেশ-বিদেশের প্রতিটি ঘটনায় নিজের মতামত জানাতেন মোদীজি। কিন্তু হাথরসের হৃদয়বিদারক ঘটনায় এখনও নীরব রয়েছেন তিনি। আপনার কী হয়েছে মোদীজি? সবকা সাথ, সবকা বিকাশ মন্ত্র কোথায় গেল? হাথরাসের ঘটনায় ভণ্ডামি বেরিয়ে পড়েছে। এ বার বরং নতুন স্লোগান তৈরি করুন, মুখ বন্ধ রাখো ভারত, কণ্ঠস্বর চেপে রাখো।’’
গত শনিবার রাহুল গাঁধী ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সঙ্গে হাথরসে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অধীর। সেখান থেকে ফিরেও বিজেপিকে একহাত নেন তিনি। সে বার অধীর বলেন, ‘‘হাথরসে এত বড় পাপ ঘটে গেল। তার পরেও বিজেপির বিবেক জেগে উঠল না। এটা রামরাজ্য নাকি রাবণরাজ্য? বিবেকের হুলে বিদ্ধ হন না আপনারা? ’’
‘সাহস কী করে হয়?’ প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে অভব্য আচরণ নিয়ে পুলিশকে তোপ বিজেপি নেত্রীর-দৈনিক আজকাল
শনিবার হাথরসে নির্যাতিতার বাড়ি যাওয়ার পথে রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে বাধা দেয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। দিল্লি–নয়ডা সীমান্তে টোল প্লাজায় ধস্তাধস্তি হয়। এক পুলিশ কর্মী প্রিয়াঙ্কার জামা ধরে টানেন। রবিবার সেই আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে যোগীর রাজ্যের পুলিশ। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
এবার পুলিশের সেই আচরণের সমালোচনা করলেন মহারাষ্ট্র বিজেপি–র সহসভাপতি চিত্রা ওয়াগ। দাবি করলেন, যোগী সরকারের এই নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত। গত বছরই এনসিপি ছেড়ে বিজেপি–তে গেছেন চিত্রা। তাঁর এই মন্তব্যে খুশি কংগ্রেস। চিত্রার প্রাক্তন সহকর্মীদের দাবি, বিজেপি–তে যোগ দিলেও নিজের ‘সংস্কার’ ভোলেননি চিত্রা।
শুক্রবার হাথরসে যাওয়ার পথে আটক হন প্রিয়াঙ্কা এবং রাহুল। তাঁদের গাড়িতে তুলে দিল্লি নিয়ে যায় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। হাথরস গ্রামে জারি ছিল ১৪৪ ধারা। শনিবার ফের হাথরসের উদ্দেশে রওনা হন গান্ধীরা। সঙ্গে ছিল কংগ্রেস সমর্থকরা। দিল্লি–নয়ডা সীমান্তে গান্ধীদের আটকায় পুলিশ। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে গৌতম বুদ্ধ নগরের পুলিশের বাদানুবাদ চলছে। তখন হেলমেট পরা এক পুলিশ কর্মী প্রিয়াঙ্কার জামা ধরে টানছেন।
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৫
- বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।