করোনাভাইরাস
বাংলাদেশেও করোনাকালে বেড়েছে আত্মহত্যার সংখ্যা, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব দেবার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
আজ ১০ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য, ‘Creating Hope Through Action- যার বাংলা করা হয়েছে ‘কাজের মাঝে জাগাই আশা।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি গুরুত্বসহকারে পালন করা হলেও বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে এটি পালন করা হয়না। কারণ, বাংলাদেশে আত্মহত্যা এখনও একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে গুরুত্ব পায়নি। তবে, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বিশেষ করে আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করছে এমন কয়েকটি সংগঠন দিবসটিকে সীমিত আকারে পালন করছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা জণসমাগম এড়িয়ে ভার্চুয়াল বা অনলাইনে আলোচনার আয়োজন করছে।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে এমন একটি সংগঠন ব্রাইটার টুমরো ফাউন্ডেশন- এর সভাপতি জয়শ্রী জামান রেডিও তেহরানকে বলেন, আত্মহত্য নিয়ে দেশে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কারণ পরিবারের পক্ষ থেকে আইনী ঝামেলা এড়াতে বা সামাজিক নিন্দার ভয়ে অনেক সময় আত্মহত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়া হয়। আর আত্মহত্যাকে এখনো মানসিক সমস্যা হিসেবে দেখা হয়না।
বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর দেশে ১০০০ থেকে ১৪০০ জন আত্মহননের পথ বেছে নেন। এদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশী। তিনি আরও উল্লেখ করেন, করোনাকালে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটলে এ নিয়ে সরকারি মহলে তেমন একটা উদ্বেগ দেখা যাচ্ছেনা।
আত্মহত্মার কারন ব্যাখ্যা করে জয়শ্রী জামান বলেন, আর্থিক অভাব অনটন, দীর্ঘ রোগযন্ত্রনা, দাম্পত্য কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা বা পড়ালেখার হতাশা- এসব কারনে আত্মহত্যর প্রবণতা বাড়ছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে আগে থেকে সতর্ক হলে এবং উপযুক্ত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে এ প্রবণতা কমানে যেতে পারে।
স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন সোসাইটি ফর ভলান্টারি অ্যাকটিভিটিজ (এসওভিএ) দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে কাজ করছে। তাদের জরিপ অনুযায়ী, দেশের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহে আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে।গত ১০ বছরের (২০১০–১৯) তথ্য বিশ্লেষণ করে সংগঠনটি জানিয়েছে, বরাবরই আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি ছিল।
হাসপাতাল ও থানা থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করে এসওভিএ তাদের জরিপে জানিয়েছে, ২০১০ সালে ঝিনাইদহে ৩৬৬ জন আত্মহত্যা করেন। তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ১৩৫, নারী ২৩১। অর্থাৎ ৩৬ শতাংশের বেশি আত্মহত্যা ছিল পুরুষের। ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পুরুষের আত্মহত্যার এ হার পাওয়া গেছে ৪৪ শতাংশ। গত বছর ২০২০ সালে আত্মহত্যার মোট সংখ্যা ছিল ৩২০ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা ছিল ১৫১, নারী ১৬৯।
এসওভিএ’র এর প্রধান নির্বাহী মো. জাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ‘হঠাৎ করেই পুরুষ আত্মহত্যাকারী বেড়েছে। এটি শুধু ঝিনাইদহের উপাত্ত। কিন্তু করোনাকালে যে আর্থসামাজিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণে দেশজুড়েই এ পরিস্থিতি হয়েছে বলে ধারণা করতে পারি।’
বাংলাদেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেল্পলাইন “কান পেতে রই”, সমাজের অনেক মানুষের মনে হতাশা, একাকীত্ব, মানসিক চাপ এবং আত্মহত্যার প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা, এবং তাদের মানসিক সমর্থন জোগানোর কাজে নিবেদিত ।
করোনাকালে হেল্পলাইন ‘কান পেতে রই’–তে আত্মহত্যার ইচ্ছা প্রকাশ করে কল করা ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থী, পেশাজীবী এবং গৃহবধূদের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। গত সাত বছরে যেখানে শিক্ষার্থী কলদাতার সংখ্যা ছিল ৪৫ শতাংশ, করোনাকালে তা ৬০ শতাংশের বেশি হয়েছে। আগে পেশাজীবীদের মধ্যে এ হার ছিল ১০ শতাংশ, করোনাকালে যা ১৪ শতাংশের বেশি হয়েছে। গৃহবধূদের মধ্যেও ইচ্ছা পোষণকারীর সংখ্যা আগের চেয়ে করোনাকালে প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যেই ইচ্ছা প্রকাশকারীর সংখ্যা বেশি ছিল। করোনাকালে সবচেয়ে বেশি কল হয়েছে রাত ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে।
করোনাকালে পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক হেলালউদ্দিন আহমেদ গনমাধ্যমকে বলেন, ‘নারীরা সাধারণত আবেগগত কারণে এবং পুরুষেরা সাধারণত আর্থসামাজিক কারণেই আত্মহত্যা করে। করোনাকালে সারা বিশ্বে বেড়েছে জীবিকার সংকট, অনিশ্চয়তা। তাই এ কারণেই পেশাজীবী, পুরুষ এবং অপেক্ষাকৃত নবীনদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে বলে ধারণা করা যায়।’ তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, এই মহামারিকালে প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত নিজের মনের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া। এসময় নিজের ইতিবাচক দিক ও সক্ষমতার সন্ধান জরুরি’।, ##
পার্সটুডে/ আব্দুর রহমান খান/বাবুল আখতার/১০
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।