রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট: পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস
(last modified Sun, 25 Aug 2024 10:26:55 GMT )
আগস্ট ২৫, ২০২৪ ১৬:২৬ Asia/Dhaka
  • পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়
    পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের প্রথম জয়।

পাকিস্তান তাদের প্রথম ইনিংসে ৪৪৮ রান সংগ্রহ করে, তবে বাংলাদেশ মুশফিকের রহিমের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সেই স্কোর পেরিয়ে ৫৬৫ রান তোলে। এতে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানের লিড নেয়, যা তাদেরকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের বোলার বিশেষ করে সাকিব-মিরাজের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে মাত্র ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ফলে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় মাত্র ৩০ রানের। যা দুই ওপেনিং ব্যাটার সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসানের পার করতে সময় নেন ৬ ওভার তিন বল। এই জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

এক উইকেটের বিনিময়ে ২৩ রান নিয়ে পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেছিল পাকিস্তান। শুরুটা ভালো করতে পারেনি তারা। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেন হাসান মাহমুদ। তার অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে ক্যাচ দেন শান মাসুদ। শুরুতে অবশ্য আম্পায়ার আউট দেননি। পরে রিভিউ নিয়ে দেখা যায় বল ব্যাটের কানা স্পর্শ করে। ৩৭ বলে ১৪ রান করা মাসুদকে বিদায় করেন হাসান।

পরের ওভারে আবারও উইকেট নিতে পারত বাংলাদেশ। শরিফুল ইসলামের বলে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ দেন বাবর আজম, যা লুফে নিতে ব্যর্থ হন লিটন। ২৮ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানো পাকিস্তান ২৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারাতে পারত, বাবর ফিরতে পারতেন শূন্য রানে।

আবদুল্লাহ শফিকের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়েও বেশীক্ষণ টিকতে পারেননি বাবর আজম। নাহিদ রানার ১৪৬ কিমি গতিবেগের বলে বোল্ড হয়ে যান নাহিদ। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের ডেলিভারিতে কাভার ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন বাবর।

তবে টাইমিং মিস করায় ব‍যাটের কানায় লেগে বলটি আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। ফেরার আগে ৫০ বলে ২২ রান করেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। পরের ওভারেই সাকিবের বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন সাউদ শাকিল। প্রথম ইনিংসে ১৪১ রান করা এই ক্রিকেটার টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার শূন্য রানে ফিরলেন। ৬৭ রানে চতুর্থ উইকেট হারাল পাকিস্তান ।

শুরু থেকেই বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে খেলছিলেন শফিক। যদিও পাকিস্তান যখন বাংলাদেশ থেকে ১৩ রান পিছিয়ে তখনই সাকিবের বলে ফিরে যান তিনি। বাঁহাতি এই স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে ব‍যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক‍যাচ তুলে দেন শফিক।

ক্যাচটি তালুবন্দী করতে ভুল করেননি সাদমান ইসলাম। ফেরার আগে ৮৬ বলে তিনটি চারে ৩৭ রান করেন শফিক। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে পাকিস্তানের ইনিংসে আবারও আঘাত হানেন মিরাজ। সাকিব দুই উইকেট নেয়ার পর আঘা সালমানকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেন মিরাজ।

তার বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন সালমান। দারুণ একটি ক্যাচ লুফে নেন সাদমান ইসলাম। ১০৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যায় পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। মধ্যাহ্নভোজ বিরতি থেকেই ফিরেই উইকেট নেন মিরাজ। দুই রান করা শাহীন শাহ আফ্রিদিকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেছেন তিনি। ফলে ১১১ রানে সপ্তম উইকেট হারালো পাকিস্তান।

অন্যান্য ব্যাটারদের যাওয়া-আসার মাঝে একপ্রান্ত আগলে রেখে ক্যারিয়ারের দশম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রিজওয়ান। পাকিস্তানকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা এই উইকেটরক্ষক। যদিও হাফ সেঞ্চুরির পর বেশীক্ষণ টিকতে পারেননি রিজওয়ান।

অফস্টাম্পের বাইরের গুড লেংথের ডেলিভারিটি সুইপ করতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে ফিরে যান রিজওয়ান। একটু পর শেষ উইকেট হিসেবে বিদায় নেন মোহাম্মদ আলীও। শূন্য রানে তাকে বিদায় করে নিজের চতুর্থ উইকেট পূরণ করেন মিরাজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

পাকিস্তান (প্রথম ইনিংস)- ৪৪৮/৬ (১১৩ ওভার) (রিজওয়ান ১৭১*, সাইম ৫৬, শাকিল ১৪১, সালমান ১৯, আফ্রিদি ২৯*; শরিফুল ২/৭৭, হাসান ২/৭০)।

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ৫৬৫/১০ (১৬৭.৫ ওভার) (সাদমান ৯৩, মুমিনুল ৫০, জাকির ১২, শান্ত ১৬, সাকিব ১৫, মুশফিকুর ১৯১, লিটন ৫৬, মিরাজ ৭৭; নাসিম ৩/৯৩, আফ্রিদি ২/৮৮)।

পাকিস্তান (দ্বিতীয় ইনিংস)- ১৪৬/১০ (৫২.২ ওভার) (সাইম ১, শফিক ৩৭, মাসুদ ১৪, বাবর ২২, শাকিল ০, রিজওয়ান ৫১, সালমান ০, আফ্রিদি ২, নাসিম ৩, শাহজাদ ৫, আলী ০; মিরাজ ৪/২১, সাকিব ৩/৪৪)।

বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস) (লক্ষ্য ৩০ রান)- ৩০/০ (জাকির ১৫*, সাদমান ৯*)

পার্সটুডে/এআর/জিএআর/২৫