গাজায় মানবিক বিপর্যয়: ওআইসি'র জরুরি বৈঠক ডাকতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি
-
সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান 'মানবিক বিপর্যয়' মোকাবেলায় ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) জরুরি বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি।
ওআইসি মহাসচিব হুসেইন ইব্রাহিম তাহা, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান ও সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহানের কাছে পাঠানো চিঠিতে তিনি এই আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের 'দ্রুত অবনতিশীল মানবিক পরিস্থিতি' বিবেচনায় সংস্থাটির জরুরি সভা আহ্বানের অনুরোধ জানান আরাকচি।
আরাকচি লিখেছেন, “গাজায় যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, তা এখন মুসলিম উম্মাহ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অন্যতম গুরুতর সংকটে পরিণত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “গাজার পরিস্থিতি সহনশীলতার সীমা অতিক্রম করেছে। এটি শুধু একটি মানবিক সংকট নয়—বরং অবরুদ্ধ বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ। এই অপরাধগুলোর মাত্রা ও ভয়াবহতা অবিলম্বে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি রাখে।”
আরাকচি এমন সময় এই চিঠি লিখলেন যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা চরম দুর্ভিক্ষের কবলে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যে দেখা যাচ্ছে, সেখানে দুর্ভিক্ষে অন্তত ১৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৯৬ জনই শিশু। ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ১,৫০০-রও বেশি ফিলিস্তিনি। খাদ্য ও ত্রাণ বহনকারী কনভয়গুলো অবরোধ বা সীমিত করা হয়েছে।
আরাকচি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “বিশ্বস্ত মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী গাজার পরিস্থিতি এককথায় ‘গণহত্যা’ ছাড়া আর কিছুই নয়।”
তিনি জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন এবং ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর “গাজাকে স্থায়ীভাবে দখলে নেওয়ার কৌশলগত উদ্দেশ্য” তদন্ত করার আহ্বান জানান।
আরাকচি বলেন, “সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো ইসরায়েলি শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, সামরিক পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক অবস্থান—সবই একটি উদ্দেশ্যমূলক পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। এর লক্ষ্য হলো গাজার ভূখণ্ডগত ও রাজনৈতিক পরিচয় মুছে ফেলা, স্থায়ী দখলদারিত্ব, জনসংখ্যা স্থানচ্যুতি এবং ফিলিস্তিনি সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করা।”
তিনি বলেন, “গাজাকে একটি রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে বিলুপ্ত করার ঘোষণা আসলে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ, যার উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনি জাতির অস্তিত্ব ধ্বংস করা, ভূমি দখল স্থায়ী করা এবং জনগণের কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটানো।”
এই প্রেক্ষাপটে, ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসি-কে সৌদি আরবের জেদ্দায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি জরুরি সভা ডাকার আহ্বান জানান। এই সভার মূল লক্ষ্য হবে মানবিক সহায়তা সমন্বয়, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের আইনি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা এবং ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করা।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের ‘অপারেশন আল-আকসা স্টর্ম’-এর জবাবে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গাজার বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরু করে। এই যুদ্ধ এখন পর্যন্ত অন্তত ৬১,১৫৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।#
পার্সটুডে/এমএআর/৮